প্রধান মেনু

বনসুরক্ষায় আলাদা মন্ত্রনালয় গঠনের দাবি

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

সাবেরা ঝর্ণা ।।
আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বন বিভাগ দিবসটি পালনের লক্ষে “বাঘ বাড়াতে শপথ করি সুন্দরবনকে রক্ষা করি ” এ প্রতিপদ্য বিষয় নিয়ে আগামী ৩১ জুলাই বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। পৃথিবীর ভয়ংকর ও সুন্দর প্রাণী হিসেবে পরিচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন।

বনবিভাগসহ প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারনে এ বনের প্রাকৃতিক প্রহরী বাঘের সংখ্যা গত তিন বছরে সর্ব শেষ জরিপে ৮ টি বেড়ে ১১৪ টিতে দাড়িয়েছে। গত ২০১৫ সালের জরিপে এ সংখ্যা ছিল ১০৬ টি। বাঘ সংরক্ষণে যে সকল পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে নানা সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

বাঘের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের প্রয়োজন মনে করেন, খুলনা সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক গভেষক ড. আনোয়ারুল কাদির।

জীব বৈচিত্র সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবনকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক পরিষদ (ইউনেস্কো) ওয়ার্ল্ড হেরিটেস কমিটির ১৯৯৭ সালে ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২১ তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সুন্দরবনকে পৃথিবীর ৭৯৮ তম ঐতিহ্য স্থান হিসেবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সরকার এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। ১৯৯৬ সালের ৪ ফেব্রæয়ারী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনের নীল কমল বিশ্ব ঐতিহ্যের ফলক উন্মোচন করেন। এ বনের প্রাকৃতিক পাহাড়াদার হিসেবে খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহন করা দরকার বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

বাঘ আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ধারক ও বাহক। পৃথিবীর অনেকগুলো দেশের মানুষ বাংলাদেশের মানুষ চিনেনা। কিন্তু আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উপস্থিতি ছাড়া পৃথিবীর কোন চিড়িয়াখানাই পরিপূর্ণ হয় না। বাঘের প্রধান খাবার চিত্রা হরিণ ও বন্য শুকর। বাঘের পুরুষ বাচ্চা ৩ বছর ও মেয়ে বাচ্চা সাড়ে ৩ বছর বয়সে মাকে ছেড়ে নিজের মত জায়গা ঠিক করে নেয়।
২০০৪ সালের ফেব্রæয়ারী ও মার্চ মাসের প্রথম দিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ইউএনডিপির অর্থায়নে জয়েন্ট টাইগার সেন্সর্স প্রকল্পের অধীনে পায়ের ছাপ দেখে বাঘের গননা পদ্ধতি শেষ হয়। এ জরিপে ১৫৪৬ টি পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়াছে।

বাচ্চা বাঘের ছাপ পাওয়া গেছে ৩৪ টি। এ শুমারিতে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০ টি। কিন্তু সর্বশেষ স্টেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন শীর্ষ প্রকল্পের অর্থায়নে ওয়াইল্ড লাইফ ইনইস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান (ডাবিøউ আইআই) সহায়তায় বনবিভাগ ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৩০ জনের একটি দল বাঘ জরিপের কাজ শুরু গত ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে।

এই জরিপের কাজ শেষ হয় গত ২০১৫ সালের এপ্রিলে। এ জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মাত্র ১০৬ টি বাঘের অস্তিত্ব মেলে। এ খবর ছড়িলে পড়লে হতবাক হয় বিভিন্ন মহল। এ কারনে বাঘ রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে বনবিভাগ সহ প্রশাসনিক মহল।

নজরদারি শুরু হয় শিকারী ও পাচারকারী চক্রের দিকে। সর্ব শেষ এ জরিপে ৩ রেঞ্জের ৩টি বøকের ১৬৫৬ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা নিয়ে বিশেষ ধরনের ক্যমেরা দিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয় ।ক্যামেরা ফুটেজ বাছাই করে ১১৪টি বাঘের সংখ্যা নির্ধরন করা হয়েছে ।

জলবায়ূ পরিবর্তন, খাবারের অভাব ও নদী ভরাটসহ বিভিন্ন কারনে বাঘ লোকালয় ঢুকে মানুষ, গরু-ছাগল এক সময় হত্যা করতো। তখন উত্তেজিত জনতা শরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকটি বাঘ পিটিয়ে হত্যা করলেও বর্তমানে সচেতনতার কারণে লোকালয় ঢুকলেও জনতা এখন আর আগের মতো বাঘ হত্যা করেনা।
খুলনা সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক গভেষক ড. আনোয়ারুল কাদির এ প্রতিনিধিকে বলেন,গত দু’বছর পূর্বে বাঘ নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়েছে সেখানে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন । নেপাল ও ইন্ডিয়ায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্বি পেয়েছে কিন্তু সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশে গত ৩ বছরে মাত্র ৮টি বাঘ বেড়েছে ।

এটা বড়ো কিছু নয় । বাঘ তুলনা মূলক বাড়েনি ।আরো বৃদ্বি পাওয়া উচিত ছিলো । টাইগার পয়েন্টে বাঘের বসবাসে অনুকূল পরিবেশ আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । তা হলে এর চেয়ে আরো বেশী বাগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে । প্রাকৃতিকগত কারণে পৃথিবীর অন্যান্য বনের মতো সুন্দরবনও কম-বেশি হুমকির সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তন জনিতে কারণে শুধু বাঘ নয় বন্য প্রাণী এখন হুমকির মুখামুখী। লবনাক্ততা বৃদ্ধি, বাঘের খাদ্য হরিণ সঙ্কট বসবাসের অনুকূল পরিবেশ না থাকা সহ বিভিন্ন কারণে বাঘের অস্তিত্ব অনেকটা হুমকির মুখে।

পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয় রয়েছে। আমাদের দেশেও সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। বাঘ সহ বন্য প্রাণী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মোদ্দাকথা হলো, সুন্দরবন সুরক্ষিত হলেই বাঘ সুরক্ষিত হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, ১৬৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে বাঘ শুমারি কার্যক্রম ২০১৮ সম্পন্নের পর গত ২২ মে বনবিভাগের আয়োজনে ঢাকার বনভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফলাফল ঘোষনা করা হয়।

সেখানে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছে ১১৪টি । আমরা আশাবাদী আগামীতে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে । তাছাড়া বনবিভাগ সহ প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে বিগত বছরের মতো কোন বাঘ হত্যা বা শিকারের অঘটন ঘটেনি। এমনকি একসময় বনদস্যুরাও বাঘ শিকার করতো এখন সেটা নেই । বনভিবাগের কড়া নজরদারির কারনে বাঘ শিকারীরা এখন আর বনে প্রবেশ করতে পারে না । এর আগে বাঘ লোকালয়ে ঢুকলে জনতার হাতে মারা পড়তো। কিন্তু মানুষ সচেতন হওয়ায় আগের মতো এ ধরনের কোন ঘটনা এখন ঘটেনা।

 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*