প্রধান মেনু

স্কুল ম্যানেজিং কমিটি যেন থুটো জগন্নাথ

শরণখোলায় দুপুর গড়ালেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাজে ছুটির ঘন্টা

মিজানুর রাকিব্ ্ঃ

 এক সময়ের পাঁচশত টাকা মাসিক বেতনের চাকরি করা একজন শিক্ষকের বর্তমান বেতন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। সময়ের বিবর্তনে ও উন্নয়নমুখী সরকারের সদিচ্ছার ফলে মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষকদের বেতন ভাতা ২০১৩ সাল থেকে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের (শিক্ষকদের) জীবন মানের উন্নয়ন গড়লেও বাড়েনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান।

স্থানীয় শিক্ষা দপ্তরের তেমন কোনো নজরধারী না থাকায় গ্রাম পর্যায় অবস্থিত উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র খুবই হতাশাব্যঞ্জক। দুপুর গড়ালেই অধিকাংশ বিদ্যালয়ের ফাঁকিবাজ শিক্ষকরা ধীরে ধীরে বেড়িয়ে পড়েন নিজ নিজ গন্তব্যে। ফাঁকিবাজি যেন অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন দেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত এ উপজেলায়। যার ফলে দিন দিন স্কুলগুলোতে কমছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাসহ অভিভাবকরা। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষকদের কাজ কর্ম তদারকির জন্য প্রতিটি স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও তা যেন থুটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ৩০নং বগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০০নং দক্ষিণ খুড়িয়াখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূলগেটে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বিদ্যালয় দু’টিতে কোনো কোলাহল নেই। নেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী। এ যেন সরকারি ছুটি উপভোগের কোন চিত্র। বগী ও খুড়িয়াখালী এলাকার বাসিন্দা আ. রহিম (৪৫) ও সমাজ সেবক রেকসোনা বেগম (৩৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্কুল শুরু সকাল ৯টায় এবং ছুটি ৪-৩০ মিনিটে হওয়ার কথা থাকলেও ১০/১১টা ছাড়া শিক্ষকরা আসেন না।
শিক্ষকরা স্কুলে এসে নামমাত্র দু’একটি ক্লাস নিয়ে ঘড়ির কাটায় দুপুর একটা/দেড়টা বাজলেই বেশিরভাগ দিন স্কুল বন্ধ করে ধীরে ধীরে সবাই বেড়িয়ে পড়েন। এসব স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর চেয়ে নদীতে মাছ ধরতে ও জঙ্গলে কাঠ কাটতে পাঠানো ভালো। মাস শেষে সরকারি ২৫/৩০ হাজার টাকা বেতন তুললেও ছাত্র/ ছাত্রীদের তেমন কোনো উপকার হয় না। তাদের মতে প্রাথমিক শিক্ষার ভীত মজবুত করতে হলে কর্মরত শিক্ষক/শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরধারীর মধ্যে রেখে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যথায় নতুন প্রজন্ম মেধাশুন্য হয়ে পড়বে।

এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলিতে ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও তারা কোনো খোঁজ খবর রাখেন না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাযোশে অনেকে আবার ভাড়াটে লোকের মাধ্যমে ক্লাস সারেন। শিক্ষা বিভাগের এ সকল অনিয়ম দুর্নীতি দেখার যেন কেউ নেই। তাদের মতে এ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থার উন্নতির জন্য সম্মিলতিভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। এমনকি সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছা মাফিক স্কুল চালানোর ফলে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিন্ডার গার্টেনগুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় বাড়ছে।

এতে উন্নয়নমুখী সরকারের বদনাম হওয়ার পাশাপাশি তার নানামুখী উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয় দু’টির প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল আহসান ও মমতাজ খানম বলেন, শনিবারে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহিত করে একটু আগেভাগে ছুটি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, নিয়মের আগে স্কুল ছুটি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*