প্রধান মেনু

দেখার কেউ নেই

মঠবাড়িয়ায় ২শত বছরের পুরাকীর্তি ধসে পড়েছে

ইসরাত জাহান মমতাজ  :

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মিরুখালী গ্রামের প্রায় দুইশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন কারী রায় বংশের হিন্দু জমিদার বাড়ির (কুলু বাড়ি) প্রাচীন পুরাকীর্তির মূল স্থাপনাপনাটি হঠাৎ ধসে পড়েছে। বুধবার গভীর রাতে দ্বিতল ভবনের সম্মূখ অংশ ধসে বিধ্বস্ত হয়। বৃন্দাবন চন্দ্র রায় নির্মিত জমিদার বাড়িটি রায় বাড়ি/বাবু বাড়ি নামে পরিচিত। বাড়িতে অন্যান্য স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোনো নজরদারি না থাকায় অবহেলা ও অযতেœ দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমিদার বৃন্দাবন চন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়িটির মূল অট্রালিকা দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময়কাল ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চলতি বর্ষ মৌসুমে মূল ভবনটি নাজুক হয়ে যাওয়ায় বুধবার দিনগত গভীর রাতে বিকট শব্দে মূল ভবনের সামনের অংশ বিধ্বস্ত হয়ে চূর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়।

জমিদার বৃন্দাবন চন্দ্র রায় জমিদারী চালাবার জন্য সম্পূর্ণ চুন ও সুরকি দিয়ে নান্দনিক নির্মাণ শৈলী আর দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য খচিত অতি পুরাতন তিনটি বিশালাকৃতির অট্টালিকা রয়েছে। আছে মঠ। সকল ভবন গুলোর ভিত্তির তলদেশ থেকে রয়েছে একটি বিশেষ সুরঙ্গ। পরিত্যক্ত মূল ভবনের ভেতরে একটি অন্ধকার কূপ রয়েছে। সেখানে অপরাধি প্রজাদের বিচার আচারও চলত বলে কথিত আছে। বৃন্দাবন চন্দ্র রায়ের তিন ছেলে গুরু চরণ রায়, মহেশ চন্দ্র রায় ও পূর্ণচন্দ্র রায়ের বংশ ধরেরা বর্তমানে বাড়িতে বসবাস করছেন।

এলাকাবাসীর মুখে মুখে জানায়, প্রায় দুইশত বছর আগে বরিশাল জেলা থেকে বৃন্দাবন চন্দ্র কুলু এখানে ব্যবসার উদ্দ্যেশ্যে এসে তাদের গোড়াপত্তন হয়। বৃন্দাবনের বড় ছেলে পূর্ন চন্দ্র রায় মিরুখালী বাজার স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজে জমিদান এ বংশের একটি স্বীকৃত ইতিহাস। কুলু বংশের নানা জনসেবা মূলক কর্মকা- এখনও দৃশ্যমান রয়েছে। ছোট ছেলে পূর্ণচন্দ্র রায় পরবর্তীতে জমিদারী পরিচালনা করতে গিয়ে দেরশ বছর আগে দারুন নকশা খচিত একটি সার্বজনীন দূর্গা মন্দির নির্মাণ করেন। প্রতি বছর দুর-দুরান্ত থেকে পূণ্যার্থী হিন্দুরা মন্দিরে পূজা দিতে আসেন।

এখনও প্রতিবছর এখানে দূর্গা উৎসব, কালী পূজা ও বাৎসরিক কীর্তণ অনুষ্ঠিত হয়। এক সময় এ বাড়িকে ঘিরে মেলা বসত। তবে আগের মত অনুষ্ঠানে এখন আর সে প্রাণ নেই। পৃ কিংবদন্তী রয়েছে কুলু বাড়ির মাটির নীচে মাটির কলসি ভর্তি প্রচুর স্বর্ণ মুদ্রা আর নানা দামি অলংকার গচ্ছিত ছিল। ওই সব ধন সম্পদের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও কালের স্থাপনাগুলো এখন কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে।

কুলু বংশের বংশধর পংকজ রায় বলেন, প্রায় ২শত বছরের স্মৃতি বিজরীত বাড়িটি সংস্কারে যে অর্থ প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলে এমন স্থাপনা আর দ্বিতীয়টি নেই। এটি হতে পারে মঠবাড়িয়ার দর্শনীয় স্থান। মূল অট্রালিকার সামনের অংশ ধসে ভবনটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মিরুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ খান বলেন, মিরুখালীর কুলুবাড়ির প্রাচীন স্থাপনাগুলো এখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রতœত্বত্ত বিভাগের কোনো নজরদারি নেই।

ইসরাত জাহান মমতাজ
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)

 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*