প্রধান মেনু

দখিনা বাতাসে দুলছে সোনালী ধানের শীষ

শরণখোলার বোরো চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক

মাসুদ মীর ।।
আমন মৌসুমের ফসল তোলার পর কিছু জমিতে খেসারী (কলাই) চাষ হলেও বছরের অধিকাংশ সময় বাগেরহাটের শরণখোলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। সরকারী প্রণোদনা, বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠী ও উন্নয়ন সংস্থার সহযোগীতা ও উপজেলা কৃষি বিভাগের পরিচর্যায় চলতি বছরে এ দৃশ্যপট পাল্টে একফসলী ও পতিত জমিগুলোতে এখন সবুজের সমারোহ।
চোখের পলকে বেড়ে ওঠা ধানক্ষেতগুলো দখিনা বাতাসে দুলছে সোনালী ধানের শীষ। যে কারনে চাষীদের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন, আর মুখে হাসির ঝিলিক।
উপজেলার যে এলাকায় পানির উৎস আছে সেখানেই ব্যাপক বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ধানসাগর ইউনিয়নের বাওড় ও হোগলপাতি, রায়েন্দা ইউনিয়নের লাকুরতলা, মালিয়া ও উত্তর রাজাপুর, সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, চালিতাবুনিয়া ও বকুলতলা ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর, মঠেরপাড় ও দক্ষিন আমড়াগাছিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের পতিত জমিগুলো এখন সবুজের সমারোহ। সময়মত ফসল ঘরে তুলতে পারলে লাভবান হওয়া সহ নতুন এক স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৮০’র দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মান ও অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে উপজেলার মানুষ ক্রমেই এক ফসলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরের পর উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যেগ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সহায়তা ও সরকারের নানা প্রনোদনা শরণখোলার কৃষি ব্যবস্থাপনা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচী, মৎস্য অধিদপ্তরের স্বাদু পানির মাছ সংরক্ষনের জন্য খাল খনন কর্মসূচী ও বিশ্ব ব্যাংকের নির্মানাধীন বেড়িবাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকটি খাল খননের কারনে পানির অভাব কিছুটা লাঘব হলে চাষীরা নতুন করে চাষাবাদে উদ্যেগী হয়ে ওঠে।
উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের চাষীরা জানায়, কৃষি বিভাগের সহায়তায় কয়েকজন মিলে ৪০/৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করতেন। ২০২০ সালের দিকে রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদ লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ মেশিন স্থাপন ও দীর্ঘ ড্রেন নির্মান করলে চাষীরা সুফল পায়। তাই গত বছরের তুলনায় ১০ গুন বেশী জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের সফল চাষী মো. মাসুদ মীর বলেন, প্রথম চাষেই এবার তাদের জমি থেকে বাম্পার ফলন পাবেন। জমি চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচ বাবদ বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং ৪০/৫০ মনের মত ধান পাওয়া যাবে। ঠিক মত ফসল ঘরে তুলতে পারলে প্রতিমন ধান ৮০০/৯০০ টাকা দরে বিক্রি হলে প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ হবে তার।
ধানসাগর ও রায়েন্দা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিবুল ইসলাম মনি জানান, উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ও চাষীদেরকে অনুপ্রানিত করতে পারলে আগামীতে এ উপজেলার কোন জমি পতিত থাকবেনা। সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে এক ফসলের উপর নির্ভরশীল এ উপজেলার মাঠ সারা বছর ফসলে ফসলে ভরে থাকবে। শরণখোলা হয়ে উঠবে অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, গত মৌসুমে এ উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। কিন্তু এবার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। খালগুলো খনন ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে আগামীতে এ চাষ ১০ গুনে সম্প্রসারিত হবে।
তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগ উপজেলার ৩০০ চাষীকে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা ইনিষ্টিটিউটের লবন সহনশীল বীনা-১০ ও বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিষ্টিটিউটের মাধ্যমে ৬০ জন চাষীকে বিনামূল্যে বীজ সরবারহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের কর্মীরা সার্বক্ষনিক চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। ভোলা নদীর লবন পানির প্রবেশ ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬টি স্লুইজ গেট (সুলিজগেট) তালা লাগিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ###






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*