প্রধান মেনু

বাংলাদেশি জেলেদের ক্ষোভ

বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা

নজরুল ইসলাম আকন ।।

বাংলাদেশে ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধ চলছে। এই সময়ে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ায়, সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তার দাবি, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় ভারতীয় জলযানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড কাজ করছে। অপরদিকে বাংলাদেশি জেলেদের ক্ষোভ, সাগরে মাছ ধরতে না পেরে আর্থিক কষ্টে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা।দেশের বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা। এ অবতরণ কেন্দ্রসংলগ্ন খালটিতে নোঙর করা রয়েছে হাজার হাজার ট্রলার। দক্ষিণাঞ্চলের চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, পিরোজপুর, শরণখোলা, বরগুনাসহ উপকূলীয় এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাটে। অবরোধ শেষে ২৩ জুলাইয়ের পরই সাগরে ট্রলার পাঠাবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপকূলীয় ট্রলার মালিক ও শ্রমিকরা।

জানা গেছে, গত ২০ মে থেকে চলতি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ছোট-বড় ট্রলার ও ভ্যাসেল দ্বারা ইলিশ মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। যা বাংলাদেশি জেলেরা মেনে চললেও মানছেন না ভারতীয় জেলেরা। ভরা ইলিশ মৌসুমে সমুদ্রে যেতে না পেরে ৬৫ দিন অলস সময় পাড় করার কারণে অনেক জেলেরা হয়ে পড়ছেন ঋণগ্রস্ত। এক একটি সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলারে ১৫ থেকে ২০টি জেলে পরিবার নির্ভর করে। তারা বর্তমানে ধার-দেনা করে তাদের সংসার চালাচ্ছেন।

বঙ্গোপসাগরের আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজ পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্তত ৫০ নটিক্যাল মাইল অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির। বিশেষ করে বাংলাদেশে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ভারতীয় মাছ ধরার কয়েকশ অত্যাধুনিক ট্রলার এখন এই সমুদ্রসীমা চষে বেড়াচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার জলসীমার মধ্যে তীর থেকে ৩৬৭ কিলোমিটার বা ২০০ নটিক্যাল মাইলকে বলা হয় অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা। মূলত এখানেই বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পায়। এর বাইরে আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজে দুদেশের নৌকা কিংবা ট্রলারগুলো যেতে পারলেও মাছ ধরার সুযোগ নেই।

জেলেসহ ট্রলার মালিকদের অভিযোগ, গত ২০ মে থেকে বাংলাদেশ সীমানায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সুযোগে ভারতীয় জেলেরা এখন এ অঞ্চলে অবাধে মাছ শিকার করছে। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকেও মাছ শিকারের অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে।

জেলেদের একজন বলেন, ‘আমাদের দেশে অবরোধ কিন্তু ভারতে অবরোধ নেই। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে বাংলাদেশের ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

বাংলাদেশ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর  বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন মাছ শিকার বন্ধ থাকে তখন বিদেশি ট্রলারগুলো আমাদের দেশে এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম কিন্তু আমরা কোথাও প্রতিকার পাচ্ছিলাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বন্ধে বিগত দিনে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয়নি। বরং বীরদর্পে তারা (ভারতীয়রা) দেশীয় জলসীমায় অতিক্রম করে মাছ শিকার করছে।’

ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দুই দেশে একই সময় দেওয়ার দাবি জানান গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম আকন জানান, বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে খুব কাছে এসে অবৈধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা এমন ভিডিও ফুটেজ জেলেদের মাধ্যমে মোবাইলে ধারণ করেছেন তারা।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের সমুদ্র এলাকায় যাতে অন্য দেশের ট্রলার ঢুকতে না পারে তার জন্য আমাদের নৌবাহিনী কাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও বেড়ে ওঠা মাছকে নিরাপদ রাখতে সরকার চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে জেলেদের নানা ধরনের সরকারি সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*