প্রধান মেনু

নদী শাসনের ব্যবস্থা না থাকায় বিশ্ব ব্যাংকের বেড়ী বাঁধ প্রকল্পে অনিশ্চয়তা

বলেশ্বরের অব্যহত ভাঙ্গনে সাউথখালীর মানচিত্র পালটে যাচ্ছে

 আসাদুজ্জামান মিলন ।।

কোন ভাবেই থামছে না বলেশ্বর নদীর ভাঙ্গন। এ নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে ইতি মধ্যেই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের মানচিত্র পালটে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় এই ইউনিয়নের ৫ টি ওয়ার্ডের অস্থিস্ত এখন হুমকির মুখে।

সর্বশেষ রবিবার দুপুরে দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের আশার আলো মসজিদ এলাকায় আকষ্মিক ভাবে কয়েকটি দোকান ও বাড়ী সহ ৫/৬ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বলেশ্বর নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, চালিতাবুনিয়া, দক্ষিণ সাউথখালী, উত্তর সাউথখালী ও রায়েন্দা ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে সাউথখালী ইউনিয়ন। রবিবার দুপুরে আকষ্মিক ভাবে ৪/৫ টি দোকান সহ ৬/৭ বিঘা ফসলী জমি দেবে গিয়ে নদীগর্ভে হারিয়ে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী নুর মোহাম্মদ খান।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে পানির তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়ী বাঁধের প্রায় ১৫ কিলোমিটার সম্পূর্ন ভেসে যায়। দুর্বল বেড়ী বাঁধের কারনেই ওই রাতে সহ¯্রাধিক মানুষের জীবন হানী ও কয়েক হাজার ঘর-বাড়ী বিধ্বস্ত হয়। সেই থেকে সাউথখালী ও শরণখোলা উপজেলার মানুষ টেকসই বেড়ী বাঁধের দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
এ দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৬ সাল থেকে ৩৫/১ পোল্ডারে শরণখোলার ৪ টি ধানসাগর, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা সাউথখালী ও মোড়েলগঞ্জের খাওলিয়া ইউনিয়নের ৬৭ কিলোমিটার বেরী বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু হয়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চায়নার একটি কোম্পানি এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় সাউথখালী ইউনিয়নে দিনে দিনে বাড়ী ঘর, দোকান পাট ও নির্মানাধীন বেড়ীর ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। প্রকল্পের কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হলেও থামানো যাচ্ছে না সাউথখালীর ভাঙ্গন। তাই এ ভাঙ্গন রোধ করতে না পারলে ৪০০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন এ বেড়ী বাঁধ জনগনের কোন কাজে আসবে না বলে মত দিয়েছে এলাকার জনগন।

চালিতাবুনিয়া গ্রামের অধিবাসী, শিক্ষক ও সাংবাদিক নজরুল ইসলাম আকন বলেন, নির্মানাধীন এ প্রকল্প সাউথখালী বাসীকে আস্বস্ত করতে পারছে না। এ প্রকল্পে বেড়ী বাঁধ নির্মানের কাজ হলেও ভাঙ্গন এলাকায় নদী শাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই প্রতিনিয়ত শরণখোলা ভাঙ্গছে।
বগী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত ও দক্ষিণ সাউথখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, নদী শাসন না করে বেড়ী বাঁধ নির্মান শরণখোলা বাসীর কোন কাজে আসবে না। বলেশ্বর নদীর শরণখোলা অংশে ৫ কিলোমিটার নদী শাসন হলে ভাঙ্গন রোধ হবে এবং বেড়ী বাঁধটি টেকসই হবে।

বলেশ্বর নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে ইতি মধ্যে সাউথখালী ইউনিয়নের ৭ নং বগী, ৮ নং চালিতাবুনিয়া, ৬ নং দক্ষিণ সাউথখালী, ৫ নং উত্তর সাউথখালী ও ৪ নং রায়েন্দা ওয়ার্ডের বিস্তীর্ন গ্রাম ও ফসলের মাঠ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় ভৌগলিক ভাবে ওয়ার্ড গুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি শ্যামল দত্ত জানান, ২০১১ সালে এই প্রকল্পের জরিপ হয়েছিল।

সে সময় এই এলাকাগুলোতে ভাঙ্গন এত তীব্র হয়নি। তাই নদী শাসন প্রস্তাব করা হয়নি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রকল্পের সাথে নদী শাসন সংযুক্ত করতে হবে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, বলেশ্বর নদীর ভাঙ্গন রোধে শরণখোলা অংশে ৫ কিলোমিটার নদী শাসনের কোন বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*