প্রধান মেনু

আদালতে স্বীকারোক্তি

খুলনার আলোচিত সবুজ হত্যার আসামী হালিম গাজী গ্রেফতার

মাসুম হাওলাদার ।।
সিআর-৯৩/১৮ মামলায় জেলহাজতে ছিল নিহত হাবিবুর রহমান সবুজ (২৬)। সেখানেই পরিচয় হয় আসাদ, অনুপম, মোস্তফা ও হালিমের সঙ্গে। সবুজ জামিনে আসার সময় মোস্তফা তার স্ত্রীর মোবাইল নম্বার দেয় সবুজকে। তারা যেন দ্রুত তার জামিনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সবুজ পরোকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে মোস্তফার স্ত্রীর সঙ্গে। তাকে নিয়ে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। এমনকি সবুজ মোস্তফার বোনের সঙ্গেও অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে।
আর তাতেই জীবন দিতে হয় সবুজকে। মোস্তফা জামিনে এসে সবুজকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক ৫০হাজার টাকা চুক্তি হয় আসাদ, অনুপম, মোস্তফা ও হালিমের সঙ্গে। ৫মার্চ সবুজ তার এ্যাপাচি মোটরসাইকেলে করে খুলনায় আসে আসাদকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে এক কোটি টাকা লোন করে দেয়ার জন্য। তারা ময়লাপোতা মোড়ে দেখা করে এবং সবুজকে শহরে অবস্থান করতে বলে। ৬মার্চ বিকেলে সবুজ ময়লাপোতা এসে আসাদকে ফোন করে। আসাদ এসে সবুজকে নগরীর ৩৪, ফারাজীপাড়া লেনের ‘হাসনাত মঞ্জিল’ এর নীচতলার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত হয় খলিল, অনুপম, মোস্তফা ও হালিম। পরে মোস্তফার স্ত্রী ও বোনের সঙ্গে অবৈধ সর্ম্পক নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় তাদের। সকলে মিলে বিষয়টি মিমাংসা করে। খলিল বাহিরে চলে যায় মিষ্টি কিনতে। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসে সন্দেশ ও চমচম নিয়ে। সবাই মিলে খায়, কিন্তু সবুজের মিষ্টিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সবুজ অজ্ঞান হয়ে গেলে আসাদ ছোরা বুকের মধ্যে ডুকিয়ে দেয়। খলিল, হালিম, অনুপম ও মোস্তফা সবুজকে খাটের উপর চেপে ধরে। সবুজ মারা গেলে তারা মরদেহ বাথরুমে নিয়ে যায় এবং হালিম ১১খন্ড করে। পরে ব্যাগে করে তারা খন্ড দেহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়।
১৬এপ্রিল খুলনার  জিরেপয়েন্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আব্দুল হালিম গাজী (৩০) কে।

গতকাল (১৭ এপ্রিল ) বুধবার  তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পরিদর্শক শেখ আবু বকর। আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকালে আলোচিত এ হত্যাকা-ের বিবরণ দেন হালিম গাজী। হালিম গাজীর দেয়া স্বীকারোক্তি মহানগর হাকিম ড. মো. আতিকুস সামাদ রেকর্ড করেছেন। হালিম গাজী নগরীর বাগমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বিশুর বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং খুলনা জেলার কয়রা থানার মহেশ্বরীপুর গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছলে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পরিদর্শক শেখ আবু বকর জানান, এ মামলার অপর ৩ আসামি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার শাহ আউলিয়াবাগ বালিয়াডাঙ্গা সরদার বাড়ীর মৃত. নুরুল হকের ছেলে সরদার আসাদুজ্জামান আসাদ (৩৫), খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হাটবাটি গ্রামের নিভান মহলদারের ছেলে অনুপম মহলদার (৪২) ও খুলনা জেলার কয়রা থানার সায়েমখালি গ্রামের কলিম উদ্দিন গাজীর ছেলে মো. খলিলুর রহমান (৫৪) আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। তাদের দেয়া তথ্য মতে হালিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ১১মার্চ র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মেজর শামীম সরকার নেতৃতে ভোর ৫টার দিকে কুয়েটের সামনে থেকে আসাদুজ্জামানকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে তারই বাসা থেকে সকাল ৬টার দিকে খন্ডিত লাশের অবশিষ্টাংশ নাড়ি-ভুড়ি ও কাটা পা উদ্ধার করা হয়। একই সময় বটিয়াঘাটার নিজ বাসা থেকে অনুপমকে আটক করা হয়।

গত ২৪ ডিসেম্বর খুলনা আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে সরদার আসাদুজ্জামান ৪ হাজার টাকায় ওই বাড়ির নিচতলার একটি রুম ভাড়া নেয়। তার স্ত্রী এখানে না থাকলেও মাঝেমধ্যে আসতেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৭মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর শের-এ বাংলা রোডের একটি কিনিকের সামনে থেকে পলিথিনে মোড়ানো লাশের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে ফারাজীপাড়া রোডের ড্রেনের পাশ থেকে দু’টি ব্যাগে থাকা তার মাথা ও দুই হাতসহ সাতটি খন্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। ময়না তদন্তের পর ৮ মার্চ বিকেলে নিহত সবুজের খন্ডিত অংশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে লাশের মাথা, দুই হাতের চারটি খন্ড ও পায়ের উপরের অংশ থেকে গলা পর্যন্ত দুইটি অংশ ছিল। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা  ৮মার্চ খুলনা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নং-১৪।

(সংবাদটি শেয়ার করুন )

 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*