প্রধান মেনু

উপকুলীয় এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা,নষ্ট হচ্ছে উপকরন

 রিপোর্ট :মাসুম হাওলাদার, বাগেরহাট ।।
সিডর ও আইলা বিধ্বস্থ উপকুলীয় এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে নেই সুপেয় পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। পানি পানি সংকটের কারনে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পানির ট্যাংকি, মটর, বেসিনসহ পানি সংরক্ষনের বিভিন্ন উপকরন নষ্ট হচ্ছে। পানি না থাকায় দূর্যোগের সময় প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাওয়া মানুষগুলোও পড়ছে বিপাকে।

দেখভাল করার মত কোন শক্তিশালি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র গুলোরও একই অবস্থা। পয়নিস্কাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের পর সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগে বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় নির্মান করা হয় ঘূর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। দূর্যোগ মোকাবেলায় নেওয়া হয় নানা সচেতনতা মূলক কার্যক্রম। জনগণের মাঝে দূর্যোগের ভিতি কাটার পাশাপাশি সচেতনতাও বৃদ্ধি পায়। দূর্যোগের সময় প্রাণ বাঁচাতে ছুটে যাওয়া সেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে পয়নিস্কাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে এবং ভোগান্তি কমাতে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।

শরণখোলা উপজেলার লাকুড়তলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিলাল হোসেন, লাবনি, সামিয়াসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ভবন আছে। কিন্তু আমাদের বাথরুম নেই। বিদ্যালয় ভবন থেকে দূরে বাথরুমে যেতে হয়। সে বাথরুমের অবস্থাও যেমন খারাপ। পানি কোন ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের আশপাশের পুকুর বা খাল থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে যেতে হয়। আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়। আমাদের কিছু সহপাঠি আছে যারা অনেক সময় শুধু পায়খানা করার জন্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। এরকম অভিযোগ শুধু লাকুড়তলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নয় জেলার অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও একই অভিযোগ।

শরণখোলা ভাষানী কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ মোঃ ইলিয়াস হোসেন লিটন বলেন বন্যা, জলচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়ের মত দূর্যোগে এই অঞ্চলের সিংহভাগ মানুষ এখন আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। কিন্তু সেখানে সুপেয় পানি ও পয়নিস্কাসনের ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। যার ফলে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা ভোগান্তিতে পড়ে। আর এ সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেই কারও।
লাভলু, হালিম খান, মতি মিয়া, পারভীন বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানির ট্যাংকি আছে মটর নেই। অনেক কেন্দ্রে বিদ্যুৎও নেই। বালতিতে পানি নিয়ে বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। নারী পুরুষ এক জায়গা থাকতে হয়। আসলে দূর্যোগের সময় জীবন বাঁচাতে আমাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ রুমি বলেন, ঘূর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র দেখভালের জন্য কোন প্রকার শক্তিশালী কমিটি নেই। দেখভালের জন্যও দায়িত্ব প্রাপ্ত লোক নেই। যার ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো সহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের পানির ট্যাংক, টয়েলেটের বেসিন, প্যানসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।

শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। নারী-পুরুষের আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্নার জন্যও কোন ব্যবস্থা নেই। আসলে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে এক ধরণের বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। পরবর্তীতে যে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান হবে সেখানে নারী পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট করার দাবি জানান তিনি।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরের পর দূর্যোগের ক্ষতি কমাতে এই অঞ্চলে ব্যাপক কাজ করেছে সরকার। অনেক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান হয়েছে। টেকসই বেড়িবাধ নির্মান প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় এই এলাকার মানুষ দূর্যোগের বিষয়ে সচেতনও হয়েছে। তারপরও দূর্যোগ মোকাবিলায় অনেক অপূরনীয়তা রয়েছে আমাদের। আরও কিছু সাইক্লোন শেল্টার নির্মান করতে হবে। এর বাইরে ওয়ার্ড পর্যায়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি তৈরি করে সকলকে সচেতন করে দূর্যোগের ক্ষতি কমানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস‘র মহড়া প্রজেক্টের প্রজেক্ট অফিসার শেখ সোয়েব উদ্দিন বলেন, ঘূর্নিঝড়ের সময়ে তীব্র পানি সংকটে পড়তে হয় আশ্রয়কেন্দ্রে আগত মানুষদের। গেল বুলবুলের ঝড়ের সময় আমরা ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্রে পানির ব্যবস্থা করেছি। তবে প্রয়োজন রয়েছে আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে যে সব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করা হবে।

বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৩৪৫ টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের কাজ চলছে। প্রতিবছর অসহায় মানুষদের জন্য দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মান করা হচ্ছে। যে ঘরে ওই পরিবারের বসবাসের পাশাপাশি প্রতিবেশিরাও আশ্রয় নিতে পারবে দূর্যোগকালীন সময়ে। সব মিলিয়ে বাগেরহাট জেলায় দূর্যোগের ক্ষতি কমাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।#






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*