প্রধান মেনু

শিশুকে মাথা ন্যাড়াকরে কালি মেখে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

বদরুজ্জামান সুজন, নেছারাবাদ (পিরোজপুর ) ॥

 নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের বাররা গ্রামে সুপারী কুড়িয়ে নেয়ার  অভিযোগে এক শিশুর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ওয়ার্ড মেম্বরের বোনের ছেলে অপু ও মেম্বরের ভাবী।

এ ঘটনায় বাররা গ্রামে উত্তেজনা দেখা দিলে সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন পরিষদে শালিশ বৈঠকের আয়োজন করে উল্টো শিশু শাহাদৎ  (১১) কে এলাকা থেকে বের করে দেয়ার জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখেন একাধিক মেম্বর।

শাহাদতের রিকশা চালক খালু আনোয়ার জানান, বাবা-মাহীন শাহাদৎ ছোট বেলা থেকেই বাররা গ্রামের ব্যাপারী বাড়ি নানির কাছে বড় হয়। গত মঙ্গলবার একই বাড়ির সমবয়সী সিয়ামকে নিয়ে পার্শবর্তী সুপারী বাগানে যায়।

সেখানে বাগান মালিকের বউ আনোয়ারাকে দেখে তারা দুজনেই দৌড়ে পালিয়ে যায়। এসময় আনোয়ারা শাহাদৎকে ডেকে ওখানে দুটো সুপারি দেয়ার অনুরোধ করেন। শাহাদৎ সুপারি তুলে দিতে গেলে আনোয়ারা শিশুর ঘাড় মাঠির সাথে চেপে ধরে সুপারি গাছের সাথেই রশি দিয়ে হাত পা বেধে রাখে।

এ সময় শাহাদৎ কে মারধর করা হয়। বাড়ির অন্য মহিলারা নিষেধ করলেও থামেনি আনোয়ারা। এক পর্যায়ে তার মাথায় পানি ডেলে দেয়। বাররা বাজারে কম্পিউটার ও ফ্লেক্সি লোডের দোকানদার অপু এসে শাহাদতের মাথার বিভিন্ন অংশের চুল কেটে কালি মেখে দেয় ও মোবাইলে ভিডিও করতে থাকে।  বাড়ির অন্য মহিলারা শাহাদতের বাধন খুলে দেয়।

পরবর্তিতে অপুর মোবাইল থেকে বিভিন্ন জনে ন্যাড়া করার ভিডিওটি শেয়ার হলে এলাকার লোকজন অপু ও আনোয়ারার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়। জনরোষের মুখে মহিলা মেম্বর হোসনে আরা বোনের ছেলে ও ভাবী আনোয়ারাকে রক্ষায় তরিঘড়ি করে সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন।

সেখানে উল্টো শিশু শাহাদৎকে চোর সাব্যস্থ করে সাদা কাগজে শাহাদতের খালুর স্বাক্ষর রাখেন। একই সাথে খালু আনোয়ার ও শাহাদতের নানীকে হুমকি দিয়ে বলে দেন যেনো শাহাদৎ এলাকায় না থাকতে পারে।

ওকে এলাকায় দেখা গেলে সকল চুরির দায় ওর উপর দেয়া হবে বলে শালিশদারগন হুমকি দেয় বলে জানান রিকশাচালক খালু আনোয়ার।

এ ব্যাপারে শাহাদতের নানী বলেন, আমি এ রায় মানিনা। আমার নাতীকে ন্যাড়া বানিয়ে উল্টো ওকেই এলাকা ছাড়া করতে হুমকি দিচ্ছে মেম্বরা। বিষয়টি নিয়ে থানায় যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি গরীব মানুষ থানায় যেতে যে খেয়া ভাড়া লাগে তাও আমার কাছে নেই। আমি কিভাবে থানায় যাবো আর থানা কি আমাদের কথা শুনবে।

বিষয়টি নিয়ে শালিশ বৈঠকে রায় দেয়া সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর শহিদুল ইসলাম বলেন অনেক লোক এখানে এসেছিল। আমি হোসনে আরা মেম্বরসহ উভয়ের কথা শুনে এ রায় দিয়েছি। প্রশাসনকে ঘটনা না জানানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত অপু সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি,  মোবাইলে কল দিলে তার মা রিসিভ করেন। এসময় তিনি ঘটনার সাথে অপুর সংশ্লিস্টতার কথা স্বীকার করেন। এলাকাবাসী মা বাবা হারা ছেলেটি্র সাথে সংগঠিত অপরাধের  সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে মনোয়ারা সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে নেছারাবাদ থানা পুলিশ। 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*