প্রধান মেনু

আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা

মোড়েলগঞ্জসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়ি ঘেরে স্বস্তির বৃষ্টি

 
 বাগেরহাট প্রতিনিধি।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিটস্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি মাছ মরতে শুরু করেছিল। গ্রেড উপযোগী চিংড়ি মাছ মরে যাওয়ায় উপজেলার চিংড়ি চাষীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপক আশংকায় পড়েছিলেন। হঠাৎ ৭ দিনের বৃষ্টিতে আশার আলো দেখছেন ঘের ব্যবসায়ীরা।

তাপদাহের ওই অবস্থা আরো কিছুদিন বিরাজ করলে চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে রফতানিজাত চিংড়ি মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হত বলে আশংকা করছেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। টানা সাত’দিনের বৃষ্টিপাতে আশার আলো দেখছে ১০সহাস্রধিক চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী ও মৎস্য অধিদপ্তর ।

তীব্র তাপদাহে উপজেলার কয়েক হাজার ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছিল। তীব্র গরমে চিংড়ি ঘেরে এই মড়ক লেগেছে। চিংড়ি চাষীরা ধারণা করছেন, পানি স্বল্পতা ও ঘেরে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশির কারণে এ মড়ক মহামারীরুপ নিয়েছে। এ অবস্থায় আর্থিকভাবে ক্ষতিরমুখে পড়েছে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার চিংড়ি চাষীরা।

জিউধরা ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী মোশারেফ আলী জানান, চলতি মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন তিনি। ঘেরে রেণু ছাড়ার পর মাছ কেবল গ্রেড হওয়ার উপযোগী হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড গরমে মাছ মারা গেছে। এছাড়া নদী থেকে যে পানি ঘেরে নেয়া হয় সেটিও তুলনামূলক বেশি তাপমাত্রার। ফলে পানি পাল্টে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ কারণে চিংড়ি মাছ হিটস্ট্রোকে অধিকাংশ মাছ মারা গেছে। একই অবস্থা উপজেলার নিশানবাড়িয়া, বহরবুনিয়া অধিকাংশ ঘেরগুলোর। অপরদিকে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, আমার ঘেরে ২১ হাজার রেণু পোনা ছেড়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় ঘেরের পানি শুকিয়ে পানির অভাবে গ্রেড উপযোগী ঘেরের অনেক মাছ মরে গেছে। এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরতে শুরু করেছে। এখন চিংড়ি চাষে লাভবান হতে হলে চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। গত সপ্তাহে তীব্র গরমে ঘের ও পুকুরের পানির তাপমাত্র ৩৯ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা দেছে যা মাছের জন্য মারাত্মক।
তিনি আরও বলেন, জেলার চাষিরা যে পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে তা পরিকল্পিত না। তাদের ঘের প্রস্তুতিতে সমস্যা রয়েছে। তারা যদি ঘেরে সেড বা ছাউনি নির্মাণ করতো তাহলে গরমে মাছ মারা যেতো না। এছাড়া গরমে মাছের মারা যাওয়া ঠেকাতে ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির শ্যাওলা দিয়ে পানির তাপমাত্র কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ইয়াকিন আলী জানান, যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে কোন কাজ হবে না। লাগাতার বৃষ্টি না হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না। অধিকাংশ ঘেরে ১ থেকে ২ ফুট পানিতে নেমে এসেছে। অথচ এগুলোতে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি থাকার কথা।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)অমল কান্তি রায় বলেন, বাগদার সহনশীল তাপমাত্র হচ্ছে ২৭-২৮ ডিগ্রি, সেখানে একটানা ৩৫-৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জেলার অধিকাংশ ঘেরে ১ থেকে ২ ফুট পানিতে নেমে এসেছে। অথচ এগুলোতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকার কথা। ফলে তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার কিছু কিছু এলাকার ঘেরে চিংড়ি মারা গেছে। তবে এরই মধ্যে চিংড়ি চাষীদের ঘেরের তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেড নির্মাণসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাই হিটস্ট্রোকে চিংড়ি’র মড়ক কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।##

 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*