প্রধান মেনু

৭০ বছর পর মা তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন

আলোরকোল ডেস্ক।।

মঙ্গলের নেছা শেষবার ছেলের মুখটা দেখেছিলেন ১৯৫০ সালের দিকে। এখন তিনি শতবর্ষী। সন্তানের বয়সও ৮০ পার। দীর্ঘ ৭০ বছর পর গতকাল শনিবার যখন সন্তানকে স্পর্শ করলেন, তখন মঙ্গলের নেছার বুকের ভেতরের অনুভূতিটা কেমন ছিল, তা বাইরে থেকে অনুভব করা অসম্ভব; অনুমান করাও কঠিন। মায়ের কোলে ফেরা কুদ্দুছ মিয়ার অনুভূতিটাও বোঝা যাচ্ছিল না; অবুঝ শিশুর মতো মায়ের দিকে বেশ খানিকটা সময় শুধু অপলক তাকিয়েই ছিলেন তিনি।

গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামে মা-ছেলের ‘অপ্রত্যাশিত’ এই পুনঃস্পর্শের সময় আশপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরাও যেন বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় বস্তু ফিরে পাওয়ার আনন্দ অনুভব করছিলেন।

একটা সময় পর আনন্দাশ্রু সামলে নিয়ে মা মঙ্গলের নেছা বলেন, ‘কুদ্দুছ, আমার বিশ্বাস ছিল, তুই একদিন ফিরে আসবি। আমি আল্লাহর কাছে সব সময় এই দোয়াই করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

আশ্রাফবাদ গ্রামে কুদ্দুছের বোন ঝরনা বেগমের বাড়ি। কুদ্দুছের পৈতৃক ভিটা পাশের নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামে। তবে সেখানে আর কেউই থাকে না। মঙ্গলের নেছা এখন মেয়ে ঝরনার কাছেই থাকেন।

সাত বছর বয়সে কুদ্দুছ মুন্সির বাবা কালু মুন্সি মারা যান। এরপর মঙ্গলের নেছা লেখাপড়ার জন্য ১০ বছর বয়সী কুদ্দুছকে পাশের বাড়ির এক ব্যক্তির সঙ্গে রাজশাহী পাঠিয়ে দেন। সেখানে গিয়েই কুদ্দুছ হারিয়ে যান। রাজশাহীতে সাদেক মিয়ার স্ত্রী তাঁকে লালন-পালন করেন। ৩০ বছর বয়সে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বিয়ে করেন কুদ্দুছ। এর পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। তাঁর এখন তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।

বাড্ডা গ্রামের সফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সিংশাইর গ্রামের এম কে আইয়ুব নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে কুদ্দুছ মিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে নবীনগর গ্রামের কয়েকজন আইয়ুবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তাঁরা গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে যান এবং ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কুদ্দুছ মিয়ার কথা বলিয়ে দেন। তখন হাতের কাটা চিহ্ন দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন মা।

এম কে আইয়ুব বলেন, ‘আমার একটি ফেসবুক  পোস্টের কারণে ৭০ বছর পর মা তাঁর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন, এতেই আমার অনেক আনন্দ লাগছে।’

কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে সোহেল মুন্সি বলেন, ‘কোনো দিন ভাবিনি আমার দাদিকে দেখতে পাব। আমার বাবা তাঁর মাকে ফিরে পাবেন।’

কুদ্দুছ মিয়া বলেন, ‘নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। বাকি জীবনটা আমি মায়ের সঙ্গেই থাকব।’






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*