৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি
বাগেরহাট প্রতিনিধি ।।
পার্ট টাইম কাজ করে আয়ের লোভ দেখিয়ে বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীদের ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লিমিটেড নামে একটি এমএলএম কোম্পানি।
২১ অক্টোবর বিকেলে কয়েকজন গ্রাহক টাকা চাইলে শহরের মিঠাপুকুরস্থ মল্লিকা ভবনের তিন তলার অফিস থেকে পালিয়ে যায় বাগেরহাট অফিসের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম টিটু। এক সপ্তাহ ধরে অফিস বন্ধ থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারী স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আলী বলেন, ৬ মাস আগে আরিফুল ইসলাম নামের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লিমিটেডে যুক্ত হই। তখন তারা বলেছিল এখানে আসবা পণ্য সেল করবা টাকা পাবা। কাজ করতে হলে একটি পয়েন্ট অর্জন করতে হবে এর জন্য ২ হাজার ৭৫০ টাকা দিতে হবে। বেশি পয়েন্ট নিয়ে কাজ শুরু করলে বেশি আয়। তাই আমি নিজে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি।
কাজ শুরু করার পরে প্রায় ৭০ জনকে এ কোম্পানিতে যুক্ত করি। তারা প্রায় ৩ লাখ টাকা দিয়েছে এ কোম্পানিকে। গত এক সপ্তাহ ধরে অফিস বন্ধ। কর্মকর্তাদের ফোন করলে তারা ফোন ধরে না।
বিনিয়োগকারী রাকিব ফরাজী বলেন, কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করে ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি। পরে নিজের অনেক বন্ধুবান্ধবকে এ কোম্পানিতে যুক্ত করি। তারাও টাকা বিনিয়োগ করেছে।
শুধু এরা নয়, প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী পার্ট টাইম কাজ করে আয় করার জন্য টাকা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লি. নামের এমএলএম কোম্পানিকে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কিছু মানুষও রয়েছে। যারা বিভিন্ন অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছে এই কোম্পানিটিতে।
৫ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঠুনকো অজুহাতে বাগেরহাট অফিস বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিটি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে মিঠাপুকুরস্থ মল্লিকা ভবনের তিন তলায় গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ কেসি গেট। গেটের ভিতরে ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লিমিটেডের লোগো সংবলিত একটি ছবি রয়েছে। ভবনের বাইরেও একটি সাইনবোর্ড রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট অফিসের ইনচার্জ হিসেবে আরিফুল ইসলাম ও শামীম হাসান নামের দুই ব্যক্তির নাম শোনা যায়। আরিফুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি এক সময় ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লি. বাগেরহাট অফিসের দায়িত্বে ছিলাম। এখন ওই কোম্পানির দায়িত্বে নেই। ৪ মাস আগে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে আমার চাকরি হয় সেখানে আছি। বর্তমানে শামীম হাসান দায়িত্বে আছেন।
শামীম হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওখানে আরিফ দায়িত্বে আছেন। আরিফ তো আপনার নাম বলল এমন প্রশ্নে শামীম বলেন আরিফ চলে যাওয়ার পরে কোম্পানি আমাকে দায়িত্ব নিতে বলেছিল।
কিন্তু আমি দায়িত্ব নেইনি। আমার কিছু ডিস্ট্রিবিউটর আছে, তার জন্য আমি মাঝে মধ্যে বাগেরহাট যাই। আমি মূলত খুলনাতে কাজ করি। খুলনায় ভালই চলছে অফিস। এখানে তো কোনো সমস্যা নেই।
শামীম আরও বলেন, ২০১৪ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা লাইসেন্স নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০১৫ সালে সরকার আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
কোম্পানির খুলনা জোনাল ডিলার খালিদ হাসান বলেন, আরিফুল ইসলাম বাগেরহাটের শাখা নিয়েছিল। সে কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে।
এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তবে বাগেরহাটের কেউ যদি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কাছে আসে তাহলে আমরা তার সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।
ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, বাগেরহাট অফিসের ঝামেলার কথা আমি শুনেছি। দুই/এক দিনের মধ্যে প্রধান কার্যালয় থেকে খুলনা অফিসে লোক যাবে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে বাগেরহাট অফিসে যাবেন। সকলের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে। যতদ্রুত সম্ভব বাগেরহাট অফিসের কার্যক্রম শুরু করব।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, একটি কোম্পানির কথা শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কেউ যদি আমাদের কাছে আসেন তাহলে আমরা আইনগত সহায়তা প্রদান করব।