ভারত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানের নতুন রুট এখন যশোরের বেনাপোল
২০০টি অস্ত্র বিক্রি করেছেন শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
আলোরকোল ডেস্ক।।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর ভারত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানের নতুন রুট এখন যশোরের বেনাপোল। এ সীমান্ত এলাকা গলিয়ে ভারত থেকে প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে ৫০ হাজার টাকায়। সেসব অস্ত্র রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। আন্তঃদেশীয় অস্ত্র কারবারে জড়িত একটি চক্রের সদস্য আকুল হোসাইন গত সাত বছরে নতুন এই রুট বেনাপোল দিয়ে এনে অন্তত ২০০টি অস্ত্র দেশে বিক্রি করেছেন। তিনি যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
অবশেষে ওই সীমান্ত দিয়ে আনা অস্ত্র ঢাকায় বিক্রি করতে এসে ধরা পড়েছেন আকুলসহ চক্রের পাঁচ সদস্য। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন ইলিয়াস হোসেন, আবদুল আজিম, ফারুক হোসেন ও ফজলুর রহমান। তারা যশোরের বেনাপোল ও শার্শার বাসিন্দা। গত বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল।
এ সময় তাদের কাছ থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল, আটটি ম্যাগাজিন ও আট রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার। তাদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিদের একটি চক্র সীমান্তবর্তী এলাকা যশোরের বেনাপোল থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে সেগুলো সারাদেশে অপরাধীদের কাছে সরবরাহ করছিল। তারা অস্ত্র ও গুলি বিক্রির জন্য প্রাইভেট কার নিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢাকায় ঢুকবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল দারুস সালাম এলাকার দিয়াবাড়ীগামী, বেড়িবাঁধগামী এবং কল্যাণপুরগামী রাস্তায় অভিযান চালায়।
অভিযানের বর্ণনা দিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, রাত আনুমানিক সোয়া ৩টায় গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে একটি প্রাইভেট কার দ্রতগতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকে। এ সময় দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থান নেওয়া গোয়েন্দা দলকে রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে বলা হয়, অন্য দল দুটি প্রাইভেট কারটির পেছনে ধাওয়া করে। রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় জট তৈরি করা হয়।
জ্যামে আটকে পড়া গাড়িটিকে ডিবির সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘিরে ফেললে চালক ও পেছনের সিটে বসা একজন লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করলে আকুল হোসাইনের কোমরে প্যান্টে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও গলায় ঝোলানো হ্যান্ডব্যাগে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল এবং পাঁচ রাউন্ড গুলি ও আটটি খালি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া আবদুল আজিম ও ইলিয়াস হোসেনের কোমরে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিসহ একটি করে বিদেশি পিস্তল মেলে। গ্রেপ্তার করা হয় তাদের সহযোগী মিলন হোসেন ও প্রাইভেট কারের চালক ফজলুর রহমানকেও।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের হোতা আকুল নিজে এবং তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছিল। অস্ত্র চোরাচালান ছাড়াও চক্রের সদস্যরা তক্ষক নিয়ে প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, স্বর্ণ চোরাচালান, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি এবং ইয়াবা ও আইসের মতো মাদকের কারবারেও জড়িত।
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, চক্রটি ভারত থেকে ২৮ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কেনা অস্ত্র বাংলাদেশে এনে বিক্রি করত ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। ভারত থেকে সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আনা এসব অস্ত্র দিয়ে দেশে ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারের মতো সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। আকুলের নামে যশোরে এখন পর্যন্ত আটটি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকায় কার কার কাছে সে অস্ত্র বিক্রি করেছে তাদের নাম জানার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি জমি দখলে কিছু অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। সেই অস্ত্র এদের কাছ থেকে এসেছিল কিনা, তাও জানার চেষ্টা চলছে। আবার কোনো রাজনৈতিক দল, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও জঙ্গিদের সরবরাহ করা হয়ে থাকলেও তা বের করা হবে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে কোনো গোষ্ঠী এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে কিনা, তা-ও তদন্তের আওতায় রয়ে।
উল্রেখ্য ,২০১৯ সালের ১৪ জুন পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা আকুলের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে দেশীয় ধারালো অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও ফেনসিডিল উদ্ধার করে।