প্রধান মেনু

সিরাজগঞ্জের চৌহালী-এনায়েতপুর নৌপথে নাব্যতা সঙ্কট, যাত্রীদের দূর্ভোগ চরমে

শফিউল আযম, পাবনা থেকে ।।
অভিন্ন নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ বুকে ধারন করে বয়ে চলা যমুনা নদীর বুকে অসংখ্য ছোট-বড় চর ও ডুবোচর জেগে ঊঠেছে। যমুনায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় চৌহালীর সাথে এনায়েতপুরের সহজ যোগাযোগের একমাত্র নৌপথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ফলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু অথবা পাবনার বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা হয়ে ঘুর পথে গন্তেব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের দ্বিগুন ভাড়ার পাশাপাশি সময়ের অপচয় হচ্ছে। এদিকে ঘুর পথে যাতাযাতের কারণে নৌকার মাঝিমাল্লা, যাত্রী সাধারন বিশেষ করে মহিলাযাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় নৌকার মালিক ও মাঝিমাল্লারা জানিয়েছেন, অগভীর সরু চ্যানেল দিয়ে জেলেদের মাছ ধরা ও যাত্রীবাহী ছোট ছোট নৌকা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বড় বড় যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে যমুনায় বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় নৌ চ্যানেলটি দ্রæত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ছোট ছোট নৌকা চলাচলও যে কোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে নৌকার মাঝিমাল্লারা জানিয়েছে। এদিকে তাদের পক্ষে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ড্রেজিং করে নৌচ্যানেলটি সচল রাখা সম্ভব নয়। এলাকাবাসী জরুরী ভিত্তিতে চ্যানেলটি খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ একসঙ্গে ধারন করে যমুনা নদী বিশাল জলরাশি নিয়ে বির্স্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় যমুনা নদীর বুকে অসংখ্য ছোট-বড় চর ও ডুবোচর জেগে ওঠায় মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে চৌহালীর সাথে এনায়েতপুরের নৌপথে সহজ যোগাযোগের একমাত্র চ্যানেলটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে এ পথে চলাচলকারী নৌকার মাঝিমাল্লারা জানিয়েছেন।
বিআইডাবিøউট্এি’র একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৬ বছর আগে যমুনা নদী হয়ে তিস্তা নদীতে কার্গো জাহাজ চলাচল করতো। এখন আর কার্গো জাহাজগুলো চলাচল করতে পারে না। আগে যমুনা নদীতে যেখানে ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলতো, এখন সেখানে ছয় ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারছেনা। জাহাজ চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১২ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। সেখানে পানির গভীরতা রয়েছে ৫ থেকে ৬ ফুট। ২৫ বছর আগের চেয়ে এখন নৌপথ কমে অর্ধেক হয়েছে।

তিস্তা পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় যমুনা নদী হয়ে তিস্তায় আর কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। তিস্তার পানি প্রবাহ কম থাকায় যমুনায় অসংখ্য ছোট-বড় চর ও ডুবো চর জেগে উঠেছে। যমুনায় মারাত্মক নব্যতা সঙ্কটে লাইটারেজ জাহাজগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এনায়েতপুর ঘাটের নৌকার মাঝি মামুন সরকার ও স্বপন আলী জানায়, নভেম্বর মাস থেকে যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পানির গভীরতা সর্বনিন্ম পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। ফলে নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর ডুবোচর। বিশেষ করে এই নৌপথের সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের খাষইজারাপাড়া থেকে রানজানপুর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাব্যাপী বিশাল চর জেগে উঠেছে।

এতে চৌহালী উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতে মাধ্যম এনায়েতপুর ঘাটের নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে উত্তরে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু অথবা দক্ষিণে পাবনার বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা হয়ে ঘুর পথে এনায়েতপুর-চৌহালী যাতাযাত করতে হচ্ছে। এতে যাত্রী ও নৌকার মাঝিমাল্লাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।
সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ জানিয়েছেন, এনায়েতপুর নৌকা ঘাট থেকে চৌহালী উপজেলা সদরে যেতে বর্ষা মৌসুমে সময় লাগত মাত্র এক ঘন্টা।

আর এখন লাগে প্রায় তিন ঘন্টা। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ খরচ হচ্ছে। নৌকার যাত্রী আব্দুস ছালাম, রওশন আরা বেগম, জাহিদুল ইসলাম ও আলম মাষ্টার বললেন, অব্যাহত পানি হ্রাসের ফলে যমুনার বুকে বিশাল চর জেগে ওঠায় নৌকাসহ অন্যান্য নৌযান স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ফলে চরবাসীকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।
এনায়েতপুর ঘাটের ইজারাদার ইউসুফ আলী বেপারী জানিয়েছেন, গত বছর স্থানীয় ঘাট ও নৌকা মালিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলা ড্রেজার দিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার চর খনন করে একটি সরু চ্যানেল চালু করেছিল। পরে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়।

এবার তাদের পক্ষে ব্যয় বহুল খনন করে নৌ চ্যানেলটি সচল রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ক্রমাগত চ্যানেলটি ভরাট হয়ে নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে যাত্রীবাহী বড় বড় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*