প্রধান মেনু

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী শারমিনের উপরে নির্যাতন অভিযোগ

শিক্ষক স্বামী ও শ্বশুরের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিক্ষিকা শারমিন

আলোরকোল ডেস্ক ।।

 যৌতুকের কারণে শিক্ষক স্বামীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শারমিন আক্তার (২৬) নামের একজন শিক্ষিকা। পাষণ্ড স্বামী ও তার শ্বশুর তার পীঠ ও হাত থেকে কোমর পর্যন্ত রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মাঝপাড়া গ্রামে । পরে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিল শনিবার  (১৮  মে ) বিকেলে তাকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। তার অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক।

নির্যাতিতার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার হযরত শাহজামাল (রহ.) বিদ্যা নিকেতনের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বকশীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরকাউরিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার মৃত নূর ইসলামের মেয়ে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাঝপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে আব্দুল মমিনের সঙ্গে ছয় বছর আগে শারমিনের বিয়ে হয়। তাদের তাসফিয়া নামে এক কন্যাশিশু রয়েছে। আব্দুল মমিনও একজন শিক্ষক। স্থানীয় অ্যাডভ্যান্স কিন্ডার গার্টেনের সহকারী শিক্ষক তিনি।

শিক্ষিকা শারমিন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিয়ের পর থেকেই আব্দুল মমিন যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে তার স্ত্রী শারমিনকে নির্যাতন করে আসছিলেন। সর্বশেষ স্থানীয় চরকাউরিয়া বাজার সংলগ্ন শারমিনের বাবার রেখে যাওয়া জমি জোর করে লিখে নেওয়ার জন্য শারমিনকে চাপ দিয়ে আসছিলেন আব্দুল মমিন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে শারমিনের ওপর চলে ধারাবাহিক নির্যাতন।

এর জের ধরেই গত শুক্রবার গভীর রাতে আব্দুল মমিন লোহার রড দিয়ে শারমিনকে বেদম পেটায়। শারমিনের শ্বশুর হোসেন আলীও তাকে রড দিয়ে পেটায়। পিটুনিতে শারমিনের পিঠ, বাম হাত থেকে শুরু করে নিচের দিকে কোমর ও পায়ে রক্তাক্ত জখম হয়ে গেছে। তারা শারমিনের শিশুকন্যাকেও নির্যাতন করে ভয় দেখায়। রড দিয়ে পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা। রাতেই শারমিন ও তার শিশুকন্যাকে ঘরে আটক রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন আব্দুল মমিন।

পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মো. আব্দুল্লাহ বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার বিকেলে শারমিনদের বাড়িতে গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে গুরুতর আহত ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় শারমিন ও তার শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তারা দু’জন বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শারিমনদের এলাকা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মো. হারুন অর রশীদ তার পাশে দাঁড়ান। হারুন অর রশিদ শনিবার সন্ধ্যার পর শারমিনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি একটি লিখিত অভিযোগ বকশীগঞ্জ থানায় জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

পৌর কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ শনিবার রাতে বলেন, ‘শারমিনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। তার জরুরি উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাকে নির্যাতনের ব্যাপারে রাতেই বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।’

এদিকে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হুসনে মোবারক বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার শিক্ষিকা শারমিনকে এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। দরকার হলে রবিবার সকালে তার আরো উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শারমিনের একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। রবিবার অভিযোগ যাচাই বাছাই করে মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*