প্রধান মেনু

সম্পত্তি দখল সহ এলাকা ছাড়া করতে নানা ষড়যন্ত

শরনখোলায় আতংঙ্কে রাত কাটে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা বাবুলের পরিবারের

আলোরকোল ডেস্ক ।। 

রাতে ঠিক মতো একটু ঘুমাতে পারিনা, কে বা কারা দরজায় লাথি মারে, জালানা সহ মুল গেট টানা-টানি করে, ঘরের চালায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, সব সময়ই আতংকে থাকি।
বাবা মারা যাওয়ার পর এখন এভাবেই প্রতিটি দিন কাটছে আমাদের। কত দিন আর মুখ বুঝে এতো অত্যাচার সহ্য করবো। আমরা একটু বাঁচতে চাই ভাই? কারো অভিবাবক হারিয়ে গেলে আপন মানুষ সহ চেনা মূখ গুলো যে মুহুর্তেই পর হয়ে যায় তা আগে কখনো জানা ছিল না ।

প্রায় দুই বছর আগে আব্বু মারা যায় । তার পর থেকে আমাদের জমিজমা লুটে পুটে খাওয়ার জন্য আপন চাচারাই এখন আমাদের শত্রæ হয়ে দাড়িয়েছে। রাত পোহালে আমরা কোথায় যাই, কি করি,আমাদের পিছনে সর্বদা ছায়ার মতো লেগে থাকেন তারা। কারনে অকারনে গায়ে পড়ে সংঘাত সৃষ্টি করতে চান । এখন যে কোনো ভাবে মা- সহ আমাকে মেরে ফেলতে পারলেই তাদের সকল চাওয়া পাওয়া পুর্ন হয়।
শুনেছি পিতার শুন্যতা নাকি চাচারাই পুরন করেন । কিন্তু আমাদের বেলায় তা সম্পুর্ন বিপরীত । এখন আমরা যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছি। আর কতো নির্যাতনের শিকার হবো আমরা।বেঁচে থাকার কোন অধিকার কি আমাদের নাই। চোখে মুখে অনেটা আতংকের ছাপ নিয়ে এমন অসহায়ত্তের কথা গুলো জানালেন , বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার ১নং-ধানসাগর ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা (প্রায়ত) মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ বর্ডার-গার্ড (বিজিবির) ৩২ ব্যাটারলিয়ানের (অবসরপ্রাপ্ত) ল্যান্স নায়েক মোঃ-গোলাম সরোয়ার বাবুল সর্দারের বড় মেয়ে সাদিয়া সুলতানা সাথী।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত,আব্দুল আজিজ সর্দারের বড় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গোলাম সরোয়ার বাবুল ২০০৭ সালে চাকুরী হতে অবসরে আসেন । পরে ২০১৪ সালে তার পিতার সম্পত্তি ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে ভাইদের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয় । ওই সময় কয়েক ভাই মিলে বাবুলকে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করেন । পরে তিনি ৩নং নলবুনিয়া মৌজার ৩৬৪ নং খতিয়ান থেকে তার ভোগ দখলীয় ৮শতক জমি ওই এলাকার সাধারন মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য দান করলে সেখানে ২০১৪ সালে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন তৎকালীন সরকার ।
পরবর্তীতে ,নলবুনিয়া আব্দুল আজিজ সর্দার বাড়ীর ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০১৫ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার পদে তার বড় মেয়ে সাদিয়া সুলতানা সাথীর চাকুরী হয় । এর পর থেকেই ভাইদের সাথে দা-কুমড়া সম্পর্কের সৃষ্টি হয় অবসরপ্রাপ্ত ওই বিজিবি কর্মকর্তার । তার পর হতে মুক্তিযোদ্ধা বাবুলের কন্যা সাদিয়াকে ক্লিনিক থেকে তাড়াতে নানা প্রকার ষড়যন্তের জাল বি¯তার করতে শুরু করেন বাবুলের আপন ছোট ভাই মোঃ ছগির সর্দার, মোঃ কবির সর্দার ,মোঃ কামরুল ইসলাম বাদল সর্দার,মোঃ সবুর সর্দার , বোন মোসাঃ শিল্পী বেগম ও চাচাতো ভাই আব্দুস ছাত্তার সর্দার সহ স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল ।

ওই চক্রের মুল হোতা আব্দুস ছাত্তার সর্দারের ইন্দোনে গত ৫বছরে সাদিয়ার বিরুদ্ধে বহু কাল্পনিক অভিযোগ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন মহলে দ্বায়ের করে তাকে হয়রানি করার পাশাপাশি ক্লিনিকে হামলা Í চালিয়েছেন ছগির সর্দার। এমনকি জোর পুর্বক ক্লিনিক অভ্যন্তরের একটি মুল্যবান কড়াই গাছ কর্তন করে তা আত্মসাত করেন ছগির সর্দার। স্ত্রী সহ ৪ জন সন্তান রেখে মুক্তিযোদ্ধা বাবুল ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর হঠাৎ করে মারা যান । কিছুদিন পর থেকে তার ছেলে-মেয়েদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন বাবুলের ভাইয়েরা । আর এসবের কলকাঠি পিছন থেকে নাড়ছেন বাবুলের প্রতিবেশি আব্দুস ছাত্তার সর্দার।
এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ সম্পত্তি বিরোধ নিস্পত্তির জন্য চলতি বছরের ফেব্রæয়ারী মাসে শরনখোলা থানা পুলিশের কাছে মুক্তিযোদ্ধা বাবুলে স্ত্রী মমতাজ বেগম একটি অভিযোগ করেও কোন সু-ফল পাননি । উল্টো প্রতিপÿরা আরো  ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে ক্লিনিক সংলগ্ন এলাকায় ওই পরিবারের ভোগ দখলীয় সম্পত্তির মাটি খননে বাঁধা দেয় এবং মমতাজ বেগম সহ তার অধীনস্থ শ্রমিকদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় ছগির ও সবুর সর্দার সহ প্রতিপÿরা।
তাছাড়া ওই পরিবারটিকে নুতন করে ফাঁসাতে চক্রের মুল নায়ক আব্দুস ছাত্তার সর্দারের কু- পরামর্শে ছগির সর্দার ও সবুর সর্দার এবং শিল্পী বেগম বাদী হয়ে স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দার স্বাÿর সহ সংশিøষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের একটি প্রত্যয়নে দোষী স্বাজিয়ে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে সাদিয়ার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দ্বায়ের করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন প্রতিপÿরা। তবে ,সিভিল সার্জনের কাছে দ্বায়েরকৃত ওই অভিযোগে স্বাÿর করা ওই এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন , ছত্তার সর্দার ও ছগির সর্দার আমাদের সরকারি প্রনোদনা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে একটি সাদা কাগজে স্বাÿর নিয়েছে ।
পরবর্তীতে তারা কি করেছে তা আমরা জানিনা । তাছাড়া এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস ছালাম হাওলাদার ,সংরÿিত আসনের মহিলা ইউপি সদস্য মিসেস-দুলিয়া লোকমান ,সুলতান সর্দার ,নবী হোসেন সর্দার ,আব্দুল লতিফ হাওলাদার ও আঃ জব্বার ফরাজী সহ অনেকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বাবুল সর্দারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে তার ভাইদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল । কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তার জানাজা নামাজের অনুষ্ঠানে আব্দুস ছাত্তার সর্দার সহ অন্যরা মরদেহের খাটিয়া ধরে গ্রামবাসীদের সামনে ঘোষনা দিয়ে ছিলেন মৃত, বাবুলের পরিবারের উপর তারা আর কোন দিন অত্যাচার করবে না ।

কিন্তু অল্প দিনের ব্যাবধানে ওই পরিবারের উপর আবার যে নির্যাতন শুরু করে তারা সে দিনের শপথ ভঙ্গ করেছেন । যারা সমাজের অসহায় মানুষের উপর অন্যায় ভাবে জুলুম ও নির্যাতন করে তারা চর্তুশপদ প্রানীর মতো সমাজের বিবেকহীন মানুষ ।
তবে , ওই পরিবারটিকে নানা ভাবে হয়রানি করার নেপথ্যে আছেন বাবুলের প্রতিবেশি ও চাচাতো ভাই ছাত্তার সর্দার । সাধারন মানুষকে হয়রানি করাই তার এখন পেশা হয়ে উঠেছে । তার সাথে কারো একটু পান থেকে চুন ঘষলেই বিভিন্ন স্থানে নামে বে- নামে একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন ।
এ ব্যাপারে সংশিøষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মঈনুল হোসেন টিপু বলেন , সম্পত্তি নিয়ে উভয় গ্রæপের মধ্যে সমস্যা আছে। আমি কয়েক বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি । এছাড়া একদিন ওই ক্লিনিকে গিয়ে আমি বন্ধ পেয়েছি । তবে সেদিন নাকি ছুটির দিন ছিল । এছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম এ খালেক খান বলেন, সহ কর্মী বাবুল মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি বিরোধের বিষয়টি একবার নিস্পত্তি করা হয়েছে । বর্তমান বিষয়ে আমার জানা নাই ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফরিদা ইয়াসমিন জানান, অভিযোগের বিষয়টি আমিও খোঁজ খবর নিয়েছি । ওই ক্লিনিকে কোন ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়নি । অভিযোগের বাদী সাদিয়ার চাচা ছগির ও সবুর সর্দারদের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় বার বার তারা সাদিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন। তবে, আব্দুস ছাত্তার সর্দার বলেন , ওই পরিবারের সাথে আমার কোন দ্বন্দ নেই । আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করে থাকলে তা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন । অন্যদিকে, ছগির সর্দার সহ অন্যরা বলেন, আমরা তাদের কোন হয়রানি করছি না । জমি নিয়ে সমস্যার ইতিমধ্যে সমাধান হয়েছে । তবে, স্থানীয়রা ক্লিনিকে সেবা বঞ্চিত হওয়ায় আমরা একটি অভিযোগ দিয়েছি । যাতে তাকে এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। ##






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*