উত্তোলিত মাটি ফেলার জায়গা সংকটে
মোংলা-ঘাষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেলের খনন কাজ হুমকির মুখে
আবু হোসাইন সুমন, মোংলা ।।
নদী থেকে উত্তোলিত পলি ফেলার জায়গা সংকটের কারণে বাগেরহাটের মোংলা-ঘাষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেলের খনন কাজ হুমকির মুখে পড়েছে। চ্যানেলটির মোংলা ও রামপাল অংশের প্রায় ২৬ কিলোমিটার নদীর দু’পাড়ের জায়গা ভরাটের পর এখন নতুন করে জায়গা না পাওয়ায় অনেকটা বন্ধের উপক্রম হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ নৌপথের ড্রেজিং কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা বন্দরের সাথে সারাদেশের নৌপথের দূরত্ব কমাতে ১৯৭৪ সালে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘাষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌ চ্যানেলটির খনন করা হয়। কিন্তু ৮০’এর দশকের পর থেকে স্থানীয়রা ওই চ্যানেলটির সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি মাছ চাষ শুরু করে। এর ফলে জোয়ার-ভাটার পানি সংযুক্ত খাল দিয়ে নিচু ও ফসলী জমিতে প্রবাহিত হতে না পারায় দ্রুত পলি পড়ে মুল চ্যানেলই ভরাট হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ২০১০ সালে চ্যানেলটির ২২ কিলোমিটার নৌপথ পলি পড়ে ভরাট হয়ে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০১৪ সালের ১ লা জুলাই ২শ ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া চ্যানেলটির পলি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করে পুনরায় চালু করা হয়। তারপর থেকেই নিয়মতিভাবেই চলছে এ চ্যানেলটির খনন কাজ। কিন্তু দ্রুত পলি পড়তে থাকায় বর্তমানে খননকৃত মাটি ফেলার জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ চ্যানেলের দু’পাড়ে খননকৃত মাটি ফেলতে ফেলতে আর কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই।
এদিকে নদীর নাব্যতা সংরক্ষণে বিআইডব্লিউটিএর চলমান কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্থ করতে একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রি মহল নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিআইডবিøউটিএর ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আনিচ্ছুজামান বলেন, মোংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ চ্যানেলের নাব্যতা ঠিক রাখতে সোমবার (১৫ জুলাই) পর্যন্ত ২৭৭ দশমিক ৪৬ লক্ষ ঘনমিটার মাটি খনন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী খননের এসব মাটি নদীর দু’পাড়েই ফেলা হয়েছে।
একই জায়গায় একাধিকবার এ মাটি ফেলায় উঁচু টিলার সৃষ্টি হয়েছে। যা যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আশংকা করেন তিনি। এছাড়া নদী খননের মাটি মোংলা ও রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে মাটি দিতে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কোন জায়গা পাচ্ছেন না তারা। তাই নদী খননের মাটি ফেলার জায়গা না পেলে মোংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননেও বাঁধা সৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মোংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননের মাটি দিয়ে নদীর দু’পাড়ের নিচু জমি ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি ও শিল্পায়ন সৃষ্টির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জমির দামও বেড়েছে কয়েকগুন। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী আলহাজ্ব এইচ এম দুলাল বলেন, আর্ন্তজাতিক এ নৌ চ্যানেলটি পুনরায় চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের আমদানী-রপ্তানীতে গুরুত্ব বেড়েছে।
স্থায়ীভাবে এ চ্যানেলটির নাব্যতা ঠিক রাখতে পারলে অর্থনৈতিকভাবেও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। চ্যানেলে খনন কাজে বাঁধার সৃষ্টি হলে নৌ চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই চ্যানেলটি চালু রাখতে সরকারের সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী গোলাম মোহাম্মদ কাকন বলেন, নদী খননের মাটি দিয়ে নদীর দু’পাড়ের অনেক নিচু এলাকা ভরাট হওয়ায় জমির দামও বেড়েছে। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ওই সব জায়গা অধিগ্রহণ করে কলকারখানা করছে। ফলে এ এলাকাকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে।
বিআইডবিøউটিএর ড্রেজিং বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাবের হোসেন মজুমদার বলেন, মোংলা-ঘাষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননের মাটি দিয়ে কয়েক’শ একর সরকারী বেসরকারী জমি ভরাট করা হয়েছে। মাটি ফেলার এখন আর কোন জায়াগা নেই। নতুন করে জায়গার সৃষ্টি না হলে ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকার কথাও জানান তিনি। #
(পরবর্তী খবর) শরণখোলায় নৌকা ডুবে জেলে নিখোঁজ, ৪টি গরুর মৃত্যু »