ভারতে পাচার হওয়া মোংলার এক কিশোরী দেশে ফিরতে আর্তনাদ
বাগেরহাট প্রতিনিধি ।।
মোংলার ১৭ বছরের এক কিশোরীর ফেসবুকে পরিচয় হয় তার যশোরের অভয়নগরের আব্দুল্লাহর। মাত্র দুই মাসের পরিচয়ে সরল বিশ্বাসে কিশোরী আব্দুল্লাহকে বিয়ে করতে চলে আসে অভয়নগর। দুই দিন সেখানে থাকার পর আব্দুল্লাহ তাকে পাচার করে দেয় ভারতে। মায়ের সাথে যোগোযোগের পর এখন সে দেশে ফিরতে চায়।
মোংলা পৌর এলাকার শ্রম কল্যান সড়কের বাসিন্দা সেই কিশোরীর মা জানান, তার তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছ্টো সে। মাস দুয়েক আগে চট্রগ্রামের কলসীদিঘিরপাড়ে তার বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বড় বোনের স্মার্ট ফোনে সে ফেসবুক একাউন্ট খোলে। এই ফেসবুকেই পরিচয় হয় যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধুলগ্রামের আব্দুল্লাহ মুন্সীর (২৫) সাথে। পরিচয় খুব দ্রুত রুপ নেয় প্রেমে। এরপর বিয়ের প্রলোভনে সরল বিশ্বাসে সে ৫ এপ্রিল খুলনার শিরোমনি এলাকায় আব্দুল্লাহর বন্ধু মেহেদী হাসান ওরফে হৃদয়ের (২৫) বাসায় এসে উঠে। এখানে আগে থেকেই আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলো। মাকে ফোন করে জানায়, সে আব্দুল্লাকে বিয়ে করতে এসেছে। আব্দুল্লাহ খুব ভালো ছেলে। মাকে এ বিয়ে মেনে নিতে বলে।
কিশোরীর মা বলেন, দুই দিন হৃদয়ের বাড়িতে অবস্থানের পর ৮ এপ্রিল সকালে তার মেয়ে তাকে ফোন করে জানায় আব্দুল্লাহকে নিয়ে সে মোংলায় আসছে। কিন্তÍ এরপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মা তার সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। ২৩ এপ্রিল ভারতের একটি মুঠোফোন(+৯১৯৫৭২৩৫৭৫৪২) থেকে কল করে এক মহিলা হিন্দী ভাষায় তাকে বলেন, তার মেয়ে এখন তাদের জিম্মায় আছে। তাকে ফেরত পেতে চাইলে পাসপোর্ট-ভিসাসহ দুই লক্ষ টাকা নিয়ে ভারতের হায়দ্রাবাদে আসতে। এরপর মেয়েকে ফোন দিলে সে আমাকে জানায়, এরা খুব খারাপ লোক। আমিসহ আরো ৫জন বাঙালি মেয়েকেও এরা নিয়ে এসেছে। খুব অত্যাচার করছে। এরপর তারা ফোন কেটে দেয়। ২৭ এপ্রিল আবারো ফোন দিয়ে কোন পরিচয় না দিয়ে সেই মহিলা আবারো দুই লক্ষ টাকা দাবি করে।
২৮ এপ্রিল মেয়ে সুকৌশলে তার বোনের ইমোতে পাচারকারী আব্দুল্লাহ ও তার বন্ধু হৃদয়ের ছবি পাঠায়। সেই ছবি নিয়ে ৩০ এপ্রিল মা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ও খুলনা পুলিশের সহায়তায় হৃদয়কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর খুলনার শিরোমনির খানজাহান আলী খানায় বাদী হয়ে তিনি আব্দুল্লাহ মুন্সী, মেহেদী হাসান ওরফে হৃদয় ও আরো কয়েক জন অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আটক দেখিয়ে হৃদয়কে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করে।
কিশোরীর দরিদ্র মা বলেন, পুলিশ প্রশাসন একজন আসামী আটক করেছে, মূল আসামীকে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তÍ কেউ বলতে পারছে না আমার মেয়েকে ভারত থেকে কিভাবে দেশে ফেরত আনা যাবে। মেয়ে তিনিদিন আগেও ফোন করে দেশে আসার জন্যে অনেক কান্না করেছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ওর বাবা অনেক বছর ধরে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমি খুব অসহায়। আমার আদরের মেয়েকে কি আমি ফেরত পাবো?
এদিকে খুলনা খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মেহেদী নামক একজন কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।মামলাটি সিআডিতে তদন্ত চলছে।##