প্রধান মেনু

কৃষাণ বধু ও কিশোর-কিশোরিরা গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তুপ করে রাখছে

পাবনা-সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে, ব্যাপক লোসানের মুখে পড়েছেন ধান, বাদাম ও তিল চাষিরা

শফিউল আযম, পাবনা থেকে ।।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ও প্রবলবর্ষণে যমুনা, পদ্মা ও বড়াল নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চরের নিন্মাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির বাদাম, তিল, পাঁকা ধান, শাক-সবজিসহ উঠতি ফসল তলিয়ে গেছে। আগাম বণ্যায় কষ্টে-ঙভপস ফলানো ফসল ডুবে যাওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাদাম, ধান ও তিলের। এদিকে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে চাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জমি থেকে ডুবে যাওয়া বাদাম তোলা ও ধান কাটার চেষ্টা করছেন। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

বিশেষ করে বাদাম ও তিল চাষিরা।পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার চরপেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া,  চরঢালা, চরকল্যানপুর, পূর্বশ্রীকন্ঠদিয়া, পদ্মারচর, চরযমুনা, বাইরচর, শ্রীপুর,বারোপাখিয়ারচর, ধীতপুর, কুশিরচর, ভুমোরিয়া, চাঁমতারা, শিংঘুলি, নয়াহাটাবরংগাইল, ভারদিঘুলিয়া, চরবলরামপুর, চরভাড়ারা, সাদিপুর, সুদিরাজপুর, আশুতোষপুর, কোমরপুর, বীরপুর, পীরপুর, চালাকপাড়া, হঠাতপাড়ারার চরের ১০ হাজার একর জমিতে বাদাম ও তিলের চাষ হয়েছে। বাদাম ও তিলের বাজার দর ভাল থাকায় কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় এক হাজার একর বেশী জমিতে বাদাম ও তিল চাষ করেছিলেন।

এদিকে আগাম বণ্যায় তিল ও বাদাম ডুবে যাওয়া ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
পাবনার বেড়া উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, এবছর বাদামের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল। সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাস, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা, বড়াল ও পদ্মার চরের নিন্মাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির বাদাম, তিল ও পাঁকা ধান পানিতে ডুবে যায়।

কৃষকেরা নৌকা নিয়ে পানিতে ডুব দিয়ে জমি থেকে বাদাম তুলছেন। সেই বাদাম যমুনার পশ্চিম পাড়ে নামানো হচ্ছে। কৃষাণ বধু ও কিশোর-কিশোরিরা গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তুপ করে রাখছে। বড়াল নদীর পানি বাড়ায় চলনবিলে শতাধিক বিঘা জমি পাঁকা ধান ডুবে গেছে। নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া ধান কাটছে চাষিরা। শ্রমিক সঙ্কটে তাদের কষ্টের শেষ নেই।
পাবনার নয়নপুর চরের চাষি জাহান মোল্লা জানিয়েছেন, চরের বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাদাম ও তিলের ফলন ভাল হয়। তিন মাসে এই ফসল ফাল্গুন মাসে আবাদ করে জ্যৈষ্ঠ মাসে ঘরে তোলা যায়। অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে বাদাম আবাদে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম পড়ে।

প্রতি বিঘা জমি হালচাষে ৫০০ টাকা, বাদাম বীজ এক হাজার ৪০০ টাকা, শ্রমিক ৭০০ টাকা, কীট নাশক ৩০০ টাকা, জমি থেকে বাদাম তোলা বাবদ প্রতি মন ১০০ টাকা হিসেবে দুই হাজার ৪০০ টাকা, পরিবহন খরচ ৪০০ টাকা মোট খরচ পরে তিন হাজার ৭০০ টাকা। হাট-বাজারে প্রতিমণ আর্দ্র বাদাম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, শুকনা বাদাম প্রতিমণ তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের পানি উন্নয়ন বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বয়ে যাওয়া ঘূির্ণঝড় আমফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাস, ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢলে ২২ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ৮ দিনে যমুনা নদীতে ১৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এতে যমুনা সংযুক্ত বড়াল সমভাবে বৃদ্ধি বেড়ে যায়। এদিকে বড়ালের পানি বেড়ে যাওয়ায় চলনবিল অঞ্চলের শতাধিক বিঘা জমির পাঁকা ধান ও অন্যান্য ফসল ডুবে যায়।

যমুনার চরাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির বাদাম ও তিল তপানিতে তলিয়ে গেছে। ৩০ মের পর ৪ দিন পানি কিছুটা হৃস পেলেও উজানের ঢলে আবারও যমুনা, বড়াল ও পদ্মা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। চরের তিল না পাকায় পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় চাষিদের দিন কাটছে আতঙ্কে।
নয়নপুরচরের কৃষক আহেদ আহেদ আলী, ফলজানা চরেরআকবর আলী, সোনা মিয়াসহ অনেকেই জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা, বড়াল ও পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়তে থাকে। ৪-৫ দিনের মধ্যে চলনবিলের দুই শতাধিক বিঘা ধান, শাক-সবজি যমুনা ও পদ্মার চরাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির পাকা ধান, বাদাম, তিলসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।

এদিকে শ্রমিক সঙ্কটে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলতে ও ধান কাটতে পারছেন না। শ্রমে-ঘামে ফলানো ফসল হারিয়ে চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে অনেক চাষি বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। এভাবে অর্ধেক বাদাম তোলা সম্ভব হচ্ছে। ক্ষেতে বেশি পানি থাকায় চরের নিন্মাঞ্চলের বাদাম তোলা ও ধান কাটা সম্ভব হয়নি। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে চরের উচু জমি থেকে অপুষ্ঠ বাদাদ তোলা হচ্ছে। ক্ষেত থেকে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলে নৌকায় করে যমুনার পশ্চিমপাড়ে এনে পেঁচাকোলা, নাকালিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নামানো হচ্ছে। সেখানে কৃষাণি ও কিশোর-কিশোরিরা গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তুপ করে রাখছে।

 রুপপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বর ঠান্টু শেখ জানালেন, গত বছরের তুলনায় এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের পর যমুনা ও পদ্মা নদীতে পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় শত শত বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। তবে অন্যান্য চরের চেয়ে কাজিরহাট এলাকা নিচু হওয়ায় এখানকার বাদামচাষীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী বলেছেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাদামসহ অন্যান্য ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে ঘুরে তা দেখে এসেছি। এখনো তলিয়ে যাওয়া জমি ও ফসলের পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শিগ্রই তলিয়ে যাওয়া জমি ও ফসলের পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করে তাদের সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*