প্রধান মেনু

খাবার সংকটে লাখো পানিবন্দী মানুষ ! নেই বিশুদ্ধ পানি

আলোরকোল ডেস্ক ।।

প্রবল বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে পাহাড়ি ঢলে যমুনা, তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্যমতে, ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরো কি পরিমাণ পানি আসবে এ তথ্য নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।

নদীগুলোর পানির শো শো শব্দে লোকজনের মাঝে আকঙ্ক বিরাজ করছে। নদীর ভয়ঙ্কর রুপ আর গর্জনে পানিবন্দী লোকজনের চোখে ঘুম নেই। অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পানিবন্দী লোকজনের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা নদীতে শনিবার বিপদ সীমার ২৫ সেন্টিমিটার, তিস্তায় ২৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রে ৩৭ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের ১১ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীতে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ও রাস্তা ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এবারের বন্যায় গোটা উত্তরের জেলাগুলোতে কয়েক লাক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে।

গাইবান্ধা : বন্যায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, কাবিলপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, গলনা, ফুলছড়ি ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, উজালডাঙ্গা, বাজে তেলকুপি, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের হরিচন্ডি, জিগাবাড়ী, সন্যাসীর চর এবং সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, নদীর পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, বেলকা, কাপাসিয়া, কামারজানি, মোল্লারচর, চরকালাসোনা, উড়িয়া, রতনপুর, রায়দাসবাড়ি, কীর্তনের পাড়া, এরেন্ডাবাড়ীসহ ৪৪টি চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, সুরমা নদীর পানি ৮ দশমিক ৪ থেকে ৮ দশমিক ৬-এর মধ্যে ওঠানামা করছে।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ৩০০ টন চাল, তিন হাজার ৭৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধাহাট থেকে বড়খাতা বিডিআর গেট বাইপাস সড়ক ভেঙে তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা শহরসহ লোকালয়ে প্রবেশ করছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই উপজেলার গড্ডিমারী মেডিকেল মোড়ের উত্তর পাশে এ সড়ক ভেঙে যায়। ফলে তিস্তা নদীর পানি সতি নদী হয়ে হাতীবান্ধা শহরসহ লোকালয়ে প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার ভোরে স্থানীয় লোকজন বালু বস্তা ফেলে হাতীবান্ধাহাট থেকে বড়খাতা বিডিআর গেট বাইপাস সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করলেও খালি বস্তা সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

বন্যার পানি হাতীবান্ধা শহরসহ লোকলয়ে প্রবেশ করায় জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পানিবন্দী লোকজনের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদী এক সাথে ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার রাতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর পানি আটকাতে সড়কে বালু বস্তা ফেলার জন্য ৫ হাজার খালি বস্তা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু পানিবন্দী লোকজন গত দুই দিন ধরে খালি বস্তার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ছুটাছুটি করলেও তাদের ভাগ্যে বালু ফেলার জন্য খালি বস্তা জুটেনি। এ নিয়ে ওই এলাকার লোকজনের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর রাস্তা ও বাঁধ ভেঙে পানি হু হু করে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি আরো চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় চর-দ্বীপচরসহ নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার ফলে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, রৌমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী ও রাজারহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় বন্যার আশঙ্কা করছে এ এলাকার মানুষ।

ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা অববাহিকার নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, শাক-সবজিসহ আমন বীজতলা। মূলত চরাঞ্চলগুলোর বাড়ি-ঘরের চারপাশে পানি ওঠায় অনেকটা পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে নদীর তীরের পরিবারগুলো।

রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সদর ইউনিয়নের বড় মাদারটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

নীলফামারী : জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেলে সেখানে ৬ সেন্টিমিটার পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমেছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীবেষ্টিত হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পানি আরও বৃদ্ধির আশঙ্কায় অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।

এদিকে অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বুড়ি তিস্তা, দেওনাই, চাড়ালকাটা, ধাইজান, খড়খড়িয়া যমুনেশ্বরীসহ সব নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেলে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে পাউবো ‘ফ্লাড বাইপাস’ কেটে দিয়ে রেড এলার্ট জারি করা হবে।

তিস্তা ব্যরাজ দোয়ানী পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ভারত গজল ডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারনা যাচ্ছে না। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের অধিকাংশ গেটই খুলে দেয়া হয়েছে।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*