প্রধান মেনু

অকালে চলে গেল একটি তরুনী প্রান

নজরুল ইসলাম আকন ।।

অনেক কস্টে অনেক অভিমানে অকালে চলে গেল একটি তরুনী প্রান। নাম তার সায়মা। এ বছর এইচ এস সি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিলো তার।

কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তী তাকে পৃথিবীর আলো- বাতাস থেকে চির মুক্তি দিয়ে নিয়ে গেল মহাকালের গহবরে। এইতো রোববার সন্ধ্যায় অসুস্থ হলো আর রাত ৮ টায় চলে গেলো না ফেরার দেশে।

সায়মা আমাদের প্রতিবেশী আত্মীয়। বাবার সাথে তার মায়ের সু- সম্পর্ক না থাকায় তারা দুই বোন থাকতো মায়ের সাথে নারায়নগঞ্জে নানা বাড়িতে। বাবা হলেন সাউথখালীর চালিতাবুনিয়া গ্রামের মৃতঃ ফজলুল হক মৃধার স্বনাম ধন্য সন্তান সৌদি প্রবাসী আসাদ মৃধা। সীমাহীন দুঃখ কস্টে গাঁথা ছিলো সায়মাদের জীবন।

আমার দূর্ভাগ্য হয়েছিলো সায়মাদের প্রতি অমানবিক আচরন দেখার। সর্বশেষ দেখেছি তিন মাস আগে। সায়মা নারায়নগঞ্জ থেকে মাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো বাবার বাড়িতে। সেখানে বাস করেন সায়মার আর একজন মা।

প্রায় এক রাত এক দিনের জার্নির পর ক্লান্ত শরীরে এসে দাড়ায় বাবার ঘরের সিড়িতে। ঘরে থাকা জননী সায়মাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। ঘন্টার পর ঘন্টা সিড়ির উপর বসে থাকার পরও পাষান জননীর হৃদয় গলেনি ক্লান্তদের ঘরে তুলে দু’ মুঠো খাবার দেয়ার।

অবশেষে সায়মা তার বাবা এবং তার মা স্বামীর ঘরে ওঠার অধিকার থেকে নির্মম ভাবে বঞ্চিত হয়ে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী আত্মীয় জাহাঙ্গীর তালুকদারের বাড়িতে। এই ফাকে ঘরে থাকা পাষান জননীটি খুব দ্রুত ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হন।

আশা আর অধিকার বঞ্চিত হয়ে তীব্র মানসিক যন্ত্রনায় মা মেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। এমন কি খাবার খেতেও ভুলে যায়। অনেক বিনয় করে প্রতিবেশী আত্মীয়রা তাদের খাবার খাওয়ান।

ঘটনার দু’দিন পরে আমার সাথে বাড়ির সামনে দেখা হয় সায়মাদের । আমি তাদেরকে আমার বাড়ি দাওয়াত দিলাম। সায়মা আমাকে জানালো, না ভাইয়া চলে যাচ্ছি নারায়নগঞ্জে। তাদের দুঃখ, কস্ট আর দারিদ্রতার বাস্তব অবয়ব দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলে ছিলাম সেদিন। তিন দিনের মাথায় চলে গেল তারা। ঘরে ফিরে এলো সেই পালিয়ে যাওয়া মহিলাটি।

দু’ একজন ছাড়া পাড়াবাসি ছিঃ ছিঃ করে ঘৃনা জানালো ওই বিমাতাটিকে। তাতে তার কিচ্ছু আসেওনি যায়ওনি। বরং যারা সায়মাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদেরকে এক হাত দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। নিজ ঘরে উঠতে না দেয়ার বিষয়টি কস্ট ভরা বুকে সায়মা প্রবাসে বাবাকে জানিয়েছিলো ফোন করে।

বাবা নাকি ছিলেন নির্বাক নিরুত্তর…! সেখানেও ভীষন আঘাতে ভেঙ্গে পরে সায়মা।

সেই দুঃখ আর ক্ষোভের সাথে পারিবারিক আরও কস্টের বোঝা ভারী হয়ে সায়মার এই অকালে চলে যাওয়া….! জানিনা ওপারেও ভাল থাকা হবে কিনা সায়মাদের






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*