প্রধান মেনু

সুন্দরবনে জেলেদের হাত ও পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ বনকর্তার বিরুদ্ধে

মোংলা প্রতিনিধি।।
সুন্দরবনে জেলেদের হাত ও পা বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করে বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।

টাকা দিয়ে ছাড়া পাওয়া নির্যাতনের শিকার জেলেরা বলেন, এর চেয়ে বনের দস্যুরাই ভাল ছিল, যে নির্যাতন বন কমকর্তারা করেন জলদস্যুরাও এই নির্যাতন করেন না। তবে ওসি রবিউলের দাবী, আমি কোন জেলেকে আটকাইনি এবং কোন জেলেকে নির্যাতন করিনি, টাকাও নেয়নি।

গত মঙ্গলবার সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদেরকে ধরে নিয়ে ভদ্রা ক্যাম্পে হাত ও পা বেঁধে পায়ের পাতায় পিটিয়ে জেলে ইয়াসির সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, শ্যামল সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, নির্মল রায়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং রমেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জোর করে নেয় ওসি। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছে বলে এসব জেলেদের বাড়ীতে ফোন করিয়ে টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন জেলেরা। নির্যাতনের শিকার এসব জেলেদের বাড়ী মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা, গিলারখালকুল ও খুলনার দাকোপের আমতলা, ঢাংমারীর ভোজনখালী এলাকায়।

জেলে নির্মল, আলমগীর, নুর ইসলাম, বাসুদেব ও আলআমিন বলেন, গত ২১ ফেব্রæয়ারী পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ষ্টেশন ও ঢাংমারী ষ্টেশন থেকে বনের অভ্যন্তরের খালে সাদা মাছ ধরার জন্য পাশ পারমিট (বনবিভাগের অনুমতিপত্র) নিয়ে পাঁচটি নৌকাসহ তারা মাছ ধরতে যান। পরে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল এবং ওই ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশা তাদের ১০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রাখেন। অবৈধভাবে বনের ভিতরে মাছ শিকারের অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছে ওসি রবিউল দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

কিন্তু জেলেরা তাদের বনবিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত পাশ-পারমিট দেখালে আরো ক্ষীপ্ত হন ওসি রবিউল। এ সময় জেলেদের পাঁচটি নৌকায় থাকা সাড়ে তিন মন কোরাল, কাইন ও জাবাসহ কয়েক প্রজাতির সাদা মাছ ওসি রবিউল লুটে নেয় বলেও জেলেরা অভিযোগ করেন। এ সময় ওই ওসি জেলে আল আমিন, নির্মল, আলমগীর ও রমেশ রায়কে হাত-পা বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে জলদস্যুরা তাদের জিম্মি করেছে বলে জেলেদের বাড়ীতে ফোন দিতে বলেন ওসি রবিউল।

নির্মম নির্যাতনের ভয়ে জেলেরা বাড়ী থেকে বিকাশের মাধ্যমে ওসি রবিউলকে টাকা এনে দেন। গত ২৫ ফেব্রæয়ারী ওসির ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে দুপুর ২ টা ৩১ মিনিটে ১৫ হাজার এবং ২ টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি বিকাশ নম্বরে ১২ হাজার ২৫০ টাকা নেন। ওসির চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বাকী টাকা ভদ্রা ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশার স্ত্রীর মাধ্যমে নেন বলেও জেলেরা জানান।

এ ঘটনায় জেলেরা বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলামের কাছে জেলেদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দাবী করে বলেন, আমি কোন জেলেকে আটকাইনি, কোন জেলেকে নির্যাতন করিনি, টাকাও নেয়নি, বলে ফোন কেটে দেন। আর ট্রলার মাঝি বাদশার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলেদের আটকিয়ে ওসি রবিউল ইসলামের নির্যাতন ও টাকা নেওয়ার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো মঈনউদ্দিন খাঁন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ডিএফওকে (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলছি। #

  রিপোর্ট

আবু হোসাইন সুমন
মোংলা, ২৯-০২-২০ইং






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*