শরণখোলায় ক্লিনিকের মালিক দিচ্ছেন অ্যানেসথেসিয়া !প্রায় এক মাস হাসপাতালে দুই নারী
আলোরকোল ডেস্ক ।।
হারুন হাওলাদার উপজেলার খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা । পেশায় একজন কৃষক । মাঠে ধানের চারা রোপনের এই মুর্হুতে চরম অর্থ সংকটে ভুগছিলেন সে । তাছাড়া পরিবারের চার সদস্যের তিন বেলা খাবারের আয়োজন করাটাই তার পক্ষে বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ।
হারুনের স্ত্রী মোসাঃ জুলিয়া বেগম (৩৫) সন্তান সম্ভাবনা থাকায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে উঠেন সে । হঠাৎ করে গত ৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তাৎÿনিক তাকে শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যায় হারুন । ওই সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স শিখা রানী জুলিয়াকে দেখে ক্লিনিকে ভর্তির পরামর্শ দেন এবং বলেন , আপনার স্ত্রীর নরমাল ড়েলীভারী হবে না দ্রæত তাকে সিজার করাতে হবে ।
পরবর্তীতে ওই নার্স জুলিয়াকে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী রায়েন্দা নাসিং হোম ক্লিনিকে যান এবং সিজারের উদ্দেশ্যে ওই দিন সকালে তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করান । তখন হারুনের কাছে টাকা নেই , কিন্তু রাতেই স্ত্রীর সিজার । ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ প্রায় বিশ হাজার টাকা দিতে হবে তার। হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে পড়ে যান তিনি ।
কিন্তু উপায় নেই, তাই অসুস্থ স্ত্রীকে ক্লিনিকে ফেলে রেখে টাকার সন্ধানে বেড়িয়ে পড়েন হারুন । আত্মীয়-স্বজন সহ নানা জনের কাছ থেকে ধার-কর্য করে ১৭হাজার টাকা জোগাড় করেন এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন । রাতেই স্ত্রী জুলিয়ার সিজার করেন শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম রাকিব ।
কিন্তু ক্লিনিকের নানা অব্যবস্থাপনার কারনে জুলিয়ার সেলাইয়ের স্থানে (ইনফেকশন) ক্ষতের সৃস্টি হয় । সংশিøষ্টরা (ইনফেকশনের) চিকিৎসা না দিয়ে তিন দিন পর তাকে রিলিজ দিয়ে দেন । জুলিয়া জানান , ওই নাসিং হোমে অ্যানেসথেসিয়া (অচেতন কারী) ডাক্তার না থাকায় সিজারের পুর্বে ক্লিনিকের মালিক মোঃ জাহিদ হোসেন তার মেরুদন্ডে একটি ইনজেকশন পুশ করে । এ সময় সুইটি আটকে যায় । পরে অনেক চেষ্টা করে ডাক্তার সাহেব তা বের করে আনেন ।
তার তিন দিন পর দেখি সেলাইয়ের স্থান পেঁকে গেছে । ক্ষত স্থানের যন্তনায় ঠিক মতো ঘুমানো কিংম্বা চলা ফেরা করতে পারি না । কোন উপায় না পেয়ে হারুন তার স্ত্রীকে ওই অবস্থায় পুনঃরায় শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
গত ২৫ দিন যাবৎ হাসপাতালে জুলিয়া কৈ-মাছের মতো ছটপট করলেও হাসপাতাল থেকে তেমন কোন সেবা পাননি বলে অভিযোগ করেন জুলিয়ার স্বামী কৃষক হারুন হাওলাদার। পরবর্তীতে হারুন ও তার স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে ক্ষেপে যান ডাঃ রাকিব ।
অন্যদিকে, জুলিয়ার তেমন কোন চিকিৎসা না হওয়ার বিষয়টি তার স্বামী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবগত করলে তিনি বলেন, আমার এখানে সব সেবা নাই, তুমি তোমার স্ত্রীকে খুলনা নিয়ে যাও ।
অপরদিকে, রায়েন্দা নাসিং হোম ক্লিনিকে গত ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ী এলাকার বাসিন্দা দিন মজুর মোঃ ইলিয়াস হোসেন তার স্ত্রী রুমানা বেগম (২৭)কে ১৬ হাজার টাকা খরচ দিয়ে সিরজার করান । কিন্তু তারও একই অবস্থা সেলাইয়ের জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ায় তিনিও গত ১৭ দিন ধরে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের আমতলী এলাকার এইচ এম হাতেম আলী জেনারেল হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ।
রুমানার স্বামী ইলিয়াস হোসেন বলেন , এই অভাবের সময় কতগুলো টাকা দিয়ে স্ত্রীর সিরাজ করালাম । কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৪দিন পর আমার রোগীর নাম কেটে দেন । ওই সময় সেলাইয়ের স্থানে সমস্যার কথা জানালে তারা বলেন , কোথাও থেকে ড্রেসিং করালে ঠিক হয়ে যাবে । এখানে ৩-৪ দিনের বেশি কোন রোগী রাখা হয়না । অথচ সিজারের টাকা নেওয়ার আগে খুব খাতিল-যত্ন করেন। টাকা গুলো জমা নেওয়ার পর ক্লিনিকের লোকেরা যেন আমাদেরকে আর চেনেনা । এখন রুমানাকে সুস্থ করতে বাধ্য হয়ে এই ক্লিনিকটিতে ভর্তি করেছি ।
তবে, চিকিৎসা সেবা নিয়ে এমন বিড়াম্বনার বিষয়ে জানতে চাইলে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, দশ বেডের একটি ক্লিনিক চালাতে হলেও সার্বÿনিক একজন (এমবিবিএস) ডাক্তারের পাশাপাশি যোগত্যা সম্পন্ন অচেতনকারী ডাক্তার সহ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত দশ জন নার্স থাকতে হবে । যদি কেউ এই সব নিয়ম নিতী অমান্য করেন, সে যেনো দেশের প্রচলিত স্বাস্থ্য নিতীকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী প্রদর্শন করলো ।
এ বিষয়ে রায়েন্দা নাসিং হোম ক্লিনিকের মালিক মোঃ জাহিদ হোসেন ফকিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , হারুন তার স্ত্রী জুলিয়া এবং রুমানার পরিবারের সকল অভিযোগ কাল্পনিক। নিয়ম নীতি মেনেই সিজার করা হয়েছে ।
এছাড়া সিজারের পর যে কোন রোগীর ইনফেকশন হতেই পারে। কিন্তু হারুনের স্ত্রী জুলিয়া হাসপাতালে থাকলেও এখন আমারা সহ সংশ্লিষ্ঠ ডা : মোঃ আরিফুল ইসলাম রাকিব সার্বÿনিক তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন ।
শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফরিদা ইয়াসমিন বলেন , জুলিয়া বেগম হাসপাতালে আছেন এবং তার চিকিৎসা চলছে কিছু দিনের মধ্যে সে সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরতে পারবেন ।##