প্রধান মেনু

শরণখোলার লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে উধাও এনজিও জোয়ারের পরিচালক আকাশ

আলোরকোল ডেস্ক ।।
 সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জ ঘেষে ইকো ট্যুরিজম আধুনিক (পার্ক) নির্মান করে সেখানে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেওয়া সহ নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এনজিও জোয়ারের নির্বাহী পরিচালক আঃ রহমান আকাশ নামের এক প্রতারক।


অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল ওই পরিচালকের সাথে গভীরভাবে জড়িত থেকে তার সকল অপকর্মের সহযোগীতা করায় হাতানো অর্থ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে আকাশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের প্রথমে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা আঃ রহমান আকাশ নামের এক যুবক বাগেরহাটের শরনখোলায় আসেন এবং স্থানীয় অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের মাঝে সল্প সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলে উন্নয়ন সংস্থা এনজিও জোয়ারের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে উপজেলা প্রশাসন পাড়া সংলগ্ন মোঃ মোস্তফা তালুকদারের মালিকানাধীন একটি ভবনে কার্যক্রম শুরু করেন।

এরপর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৬/৭ জন কর্মী নিয়োগ করে উপজেলা জুড়ে সঞ্চয় আদায়ের পাশাপাশি ডিপিএস সহ নানা রকম কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতানো শুরু করেন। কিছুদিন পর জামানত কারীরা ঋন দাবি করলে নানা তালবাহানা শুরু করেন আকাশ।

তবে, সাধারন গ্রাহকদের ঋন দেওয়ার জন্য এনজিও জোয়ারের কর্মী মারুফা আক্তার, জোসনা রানী ও আসাদুল ইসলাম সুপারিশ করলে আকাশ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি তাদের মুল সার্টিফিকেট আটক রেখে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।

এ ঘটনায় মারুফা আক্তার, জোসনা রানী ও আসাদুল ইসলাম বাদী হয়ে আকাশের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি সহ অসৎ আচরনের অভিযোগ উত্থাপন করে ২০২০ সালের ৯মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দাায়ের করেন। ওই ঘটনার জের ধরে আকাশ ও তার ৩/৪ জন সহযোগী একজোট হয়ে একই বছরের ১ মার্চ সকালে উপজেলার উত্তর কদমতলা এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ও জোয়ারের মাঠ কর্মী গৃহবধু মারুফা আক্তার (২২) এর বাড়ীতে যায় এবং তার বিরুদ্ধে কেন (ইউএনওর) কাছে অভিযোগ করা হয়েছে তার কৈফিয়ত চান।

এ সময় বাসায় মারুফাকে একা পেয়ে লোহার রড় দিয়ে বেধাড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এক পর্যায়ে মারুফা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে সুকৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর প্রভাবশালী চক্রের চাপে প্রতারক আকাশ সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নির্যাতিত মারুফার মামলা নিতে গড়িমসি শুরু করেন শরনখোলা থানার তৎকালীন (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা।

অপরদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে গৃহবধুকে নির্যাতন ও তার শীল্লতাহানীর ঘটনা নিয়ে ওই সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করলে ৬দিন পর আ. রহমান আকাশ (৩৫) ও তার সহযোগী উপজেলার দক্ষিন আমড়াগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী সোহাগ মৃধার স্ত্রী মিসেস সুমি বেগম (২৫) এবং দক্ষিন তাফালবাড়ী এলাকার বাসিন্দা তুষার মিত্রের মেয়ে সুবর্না মিত্র (৩৫) এর বিরুদ্ধে মারুফার দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ।

এ ঘটনার প্রায় একমাস পর প্রভাবশালী চক্রের চাপের মুখে আকাশের সহযোগী প্রবাসীর স্ত্রী সুমি বেগম বাদী হয়ে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে মারুফা আক্তার ও তার স্বামী জিহাদুল ইসলাম সাব্বির (২৬) সহ জোয়ারের আরেক মাঠকর্মী আসাদুল ইসলাম (২৮) এর বিরুদ্ধে একই থানায় একটি পাল্টা মামলা দায়ের করে শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা শুরু করেন আকাশের পক্ষের লোকেরা।
মারুফা জানান, আমি, জোসনা ও আসাদুল আকাশের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সে আমাদের তিন মাসের বেতন না দিয়ে চাকুরী হতে বাদ দিয়ে দেন। পরে আকাশ তার দল নিয়ে আমার বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। চিকিৎসা শেষে শরনখোলা থানায় আমি মামলা করতে গেলে স্থানীয় একটি চক্র আমার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তবে, ওই সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা পত্রিকার মাধ্যমে সঠিক বিষয়টি তুলে ধরায় প্রতারক আকাশের আসল চরিত্র সবাই জানতে পারেন। পরে আমার অভিযোগটি মামলা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করেন শরনখোলা থানা পুলিশ।

তার পরেও নুতন করে হয়রানি করতে ঘটনার একমাস পর আমি সহ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আকাশের সহযোগী সুমি বেগম স্বর্নলংকার ছিনতাইয়ের একটি কাল্পনিক অভিযোগ শরনখোলা থানায় জমা দিলে কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া একটি পাল্টা মামলা রেকর্ড করে নেয় পুলিশ।

উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের শরখোলা গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম খাঁন বলেন, জোয়ারের পরিচালক আকাশ একজন বড় মাপের প্রতারক। সে শরনখোলা ছাড়াও ইতিপুর্বে সাতক্ষীরা, ভোমরা, মুন্সিগঞ্জ ও মনিরামপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই ভাবে প্রতারনার ফাঁদ পেতে বহু মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। তার নামে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা রয়েছে। আকাশ শরনখোলায় এসে প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন লোভী ব্যক্তিকে ভাড়া করে প্রতারনার জাল বুুনতে শুরু করেন।

এছাড়া আধুনিক মানের পার্ক নির্মাণ করার কথা বলে শরনখোলা উপজেলার অনেক মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতানোর পাশাপাশি আমার মালিকানাধীন পাঁচ বিঘা জমি ২০ বছরের জন্য লীজ নেয়ার কথা বলে একটি ষ্ট্যাম্পে চুক্তি করেন। পরে দুই বছরের ভাড়ার টাকা হিসেবে ট্রাষ্ট ব্যাংকের মুন্সীগঞ্জ শাখার অনুকুলে আমার নামে ৬৬হাজার টাকার একটি ভুয়া চেক প্রদান করেন। পরে দেখি ওই একাউন্টে কোন টাকা নাই। আমি শ্রীঘ্রই ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা করব।
এ ব্যাপারে শরনখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, আকাশের প্রতারনার বিষয়টি আমি শুনেছি। তাছাড়া তার ব্যাপারে সাতক্ষীরার কিছু ক্ষতিগ্রস্থ লোক আমার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছেন। তবে, এ বিষয়ে জানার জন্য এনজিও জোয়ারের নির্বাহী পরিচালক আ. রহমান আকাশের ০১৭৪২২৮৯৭৩২ নং মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করা হলে তা বন্ধ থাকার কারনে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ##

এমাদুল হক (শামীম)
শরণখোলা, বাগেরহাট।
তাং-২৫-০১-২০২০






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*