প্রধান মেনু

৭০টির মতো বাঘ হত্যা করেছে বলে একাধিক সূত্রের দাবি

পুলিশের হাতে বাঘ হাবিব আটক

মো.সুমন হাওলাদার ।।
পূর্ব সুন্দরবনের চিহ্নিত বাঘ শিকারি হাবিব তালুকদার (৫০) ওরফে বাঘ হাবিব কে আটক করেছেন শরণখোলা থানা পুলিশ । আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের কাছে বাঘ হাবিব নামেই পরিচিত তিনি। বাঘ শিকার করাই তার নেশা। গত ২০ বছরে অন্তত ৭০টি বাঘ হত্যা করেছে বলে এলাকায় গুন্জন রয়েছে। তার নামে রয়েছে ৯টি বন অপরাধের মামলা। এর মধ্যে তিনটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। বনে নিষিদ্ধ, তবুও গোপনে ঢুকে একের পর এক শিকার করেন বাঘ-হরিণ-কুমির। অবশেষে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে পুলিশের হাতে আটক হন দুর্ধর্ষ এই বাঘ শিকারি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাঘ হাবিব পলাতক ছিলেন। মাঝেমধ্যে গোপনে বাড়িতে এসে অন্যের ঘরে ঘুমাতেন। গত রাতে (শুক্রবার) প্রতিবেশী রফিকুলের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাত আড়াইটা দিকে শরণখোলার মধ্য সোনাতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে রফিকুলের বারান্দা থেকে তাকে আটক করা হয়।

‘বাঘ হাবিবের’ বাড়ি শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বনসংলগ্ন সোনাতলা গ্রামে। তার বাবা কদম আলী সুন্দরবনের একসময়ের দুর্ধর্ষ বনদস্যু ছিলেন। বনের পাশে বাড়ি হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যপ্রাণী শিকারের সহযোগী হিসেবে এখন কাজ করেন তার ছেলে হাসান (২০) ও জামাই মিজান (২৫)। তাদের নামেও রয়েছে একাধিক মামলা ।
হাবিব গত ২০ বছর ধরে ৭০টির মতো বাঘ হত্যা করলেও তার নামে বাঘ শিকারের তিনটি এবং হরিণ শিকারের পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটিতে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। হাবিব এসব মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতেন না। বেশির ভাগ সময় বনেই কাটে তার জীবন।

জানা গেছে, ছাগল অথবা মুরগির মাংসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বনের যে সব এলাকায় বাঘের বিচরণ সেসব স্থানে রেখে দেওয়া হয় ‘বিষটোপ’। বাঘ ওই বিষ মেশানো মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মৃত আবার আহতাবস্থায়ও ধরে তার ছামড়া ও কঙ্কাল সংগ্রহ করা হয়। এভাবে বাঘ শিকার করেন তিনি। ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে তার চামড়া সংগ্রহ করে মাংস বিক্রি করে দেন। এছাড়া, ফাঁদ ও মাংসের টোপ দিয়ে হরিণ এবং কুমির শিকার করে থাকেন।

বন বিভাগ জানায়, হাবিবকে বহু আগে থেকেই সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো বন অফিস থেকেই তার নামে পাস দেওয়া হয় না। তার পরও গোপনে বনে ঢুকে বন্যপ্রাণী শিকার করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পরও এই অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। এর পেছনে একাধিক শক্তিশালী চক্র জড়িত রয়েছে।

সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) ভোলা টহল ফাঁড়ি ইউনিটের দলনেতা মো. খলিল জমাদ্দার জানান, সুন্দরবনের বাঘ-হরিণ শিকার করা হাবিবের পেশা। ২০ বছর ধরে এই কাজ করছে সে। তার নামে অনেক মামলা রয়েছে। বনের বাঘ-হরিণ শিকার করেই বন মামলা চালায় সে। কোনো বাধাই তাকে বাঘ শিকার থেকে ফেরাতে পারেনি । হবিবের বাবাও একসময় সুন্দবনের বনদস্যু ছিল।

শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাঘ শিকারি হাবিব বন বিভাগ ও পুলিশে কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। তার নামে বাঘ ও হরিণ শিকারের অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বন বিভাগের সাতটি এবং পিরোজপুর আদালতে হয়েছে একটি। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধেও বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলে শুনেছি।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, হাবিব তালুকদার বাঘ হাবিব নামে বন বিভাগের তালিকাভুক্ত অপরাধী। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত সে ৭০টির মতো বাঘ হত্যা করেছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করছে।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, বাঘ হাবিবের নামে শরণখোলা থানায় তিন ওয়ারেন্ট মুলতবি ছিল। তাকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গোপন সংবাদের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে আটক করে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*