প্রধান মেনু

পিরোজপুরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রানের নামে চাঁদাবাজী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির

আলোরকোল ডেস্ক ।।

পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু’র বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ত্রাণের নামে চাঁদাবাজী করার খবর পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাতে পিরোজপুর জেলায় ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আর এ টাকা তোলার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) লেখক ভট্টাচার্যের নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে চাঁদাবাজী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ব্যবহার করে টাকা তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু।
জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর পিরোজপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মাঝে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও জরুরী সহায়তা প্রদান কর্মসূচির আওতায় পিরোজপুরে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়।

সে লক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বরকত হোসেন হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার, প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম রেজা, আপ্যায়ন সম্পাদক আসরাফুল ইসলাম ফায়াদ, আপ্যায়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক শাহিন তালুকদার, সহ-সম্পাদক আরিব হাসান আরিফ, পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

একই সাথে দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হয়।
গঠিত ত্রাণ সহায়তা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ছাত্রলীগের একটি মেডিকেল টিম ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে পিরোজপুরে এসে ত্রাণ তৎপরতা চালায়।

তবে পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বুলবুল ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করার জন্য পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নেয়।

আর এ টাকা আদায়ের জন্য জেলা সভাপতি টিটু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ব্যবহার করে মিরাজের কাছে।

টিটু মিরাজুল ইসলামকে বলে যে, “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধি দল পিরোজপুরে আসবে ত্রাণ দিতে, তাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আপানাকে (মিরাজ) ১০ লাখ টাকা দিতে বলেছে।”

জেলা সভাপতি টিটুর উক্ত কথার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে মিরাজুর ইসলাম ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি টিটুকে ৮ লাখ টাকা দেয় ত্রাণের জন্য।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক উক্ত টাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং তারা মিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্যও বলেন নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরাজ ছাড়াও এভাবে আরো জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে ত্রাণ কর্মসূচির কথা বলে টাকা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে।

এ জন্য পিরোজপুরেও একটি প্রতিনিধিদল এবং মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিলো। সেক্ষত্রে ত্রাণ সহায়তার জন্য ত্রাণ সামগ্রীরও ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কারো কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে কাউকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয় নি।

আর পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু আমাদের (কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) নাম করে যে টাকা আদায় করেছে সে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। কোন ক্রমেই এটা কাম্য নয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি টিটু ত্রাণের জন্য মিরাজুর ইসলামের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছে তাও জানেন না জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনিরুজ্জামান অনিক।

অনিক জানান, ত্রাণ সহায়তার জন্য যে বিপুল পরিমান টাকা বিভিন্নভাবে আদায় করা হয়েছে তা আমি অবগত নই। এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রম বিষয়েও আমাকে অবহিত করা হয়নি। আমি উপস্থিতও ছিলাম না। সভাপতি সবকিছুই একাই করেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুর ইসলাম টিটু জানান, কারও কাছ থেকে কোন প্রকার চাঁদাবাজী করা হয়নি। ছাত্রলীগের ত্রাণ কর্মসূচিতে স্বপ্রণোদিত হয়েই মিরাজুল ইসলাম মিরাজ টাকা দিয়েছেন।

পিরোজপুরে বুলবুল দুর্গতদের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাপ্ত চাল এবং মিরাজুল ইসলামের দেয়া টাকা দিয়ে তেল ও ডাল কিনে বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় ঢাকা থেকে আগত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পিরোজপুরের ৪ উপজেলায় প্রায় দুই হাজার মানষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

টাকার বিষয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজুর ইসলাম জানান, বুলবুল ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আমি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করেছি।

মানবতার সেবায় আমি সব সময়ই কাজ করি। বুলবুল পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ত্রাণ প্রদানের জন্য পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টিটু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাত দিয়ে আমার কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়ায় আমি সেটা দিয়েছি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য বলেন, কারো কাছ থেকে টাকা বা চাঁদা এনে ত্রাণ বিতরণের জন্য কাউকে বলা হয়নি। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ভাবেই ত্রাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পিরোজপুরে ছাত্রলীগ সভাপতি কারো কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম করেছে সেটা আমার জানা নেই। আর এক্ষেত্রে যদি কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন টাকা নেয়া হয় সেটা তো আরো অপরাধ। এমনটি হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*