প্রধান মেনু

উত্তরাঞ্চলে পেট্রোল সঙ্কটের আশঙ্কা, যমুনায় আটকা পড়েছে ৫০টি জাহাজ

শফিউল আযম, পাবনা থেকে ।।
যমুনায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৫০টি জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ ও ট্রলার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। এতে বন্দরের আমদানি রফতানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিপিসি’র বাঘাবাড়ী ডিপো’র পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কোম্পানিতে ডিজেলের আপদকালীন মজুত রয়েছে মাত্র আড়াই কোটি লিটার। ওই পরিমান মজুত দিয়ে ৭-৮ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এদিকে জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ বন্দরে পৌছাতে না পারায় পেট্রোল সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


বেড়ার মোহনগঞ্জে যমুনা পাড়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় একাধিক সূত্র এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, বিআইডাব্লিউটিএ নৌচ্যানেল সচল রাখতে গতানুগতিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা বজায় রাখার জন্য তারা কোন বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগ করছে না। বিআইডাব্লি¬উটিএ’র অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে নাব্যতা সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে। মোহনগঞ্জে দেখা যায় ড্রেজিং করে পলিমাটি নিরাপদ দুরুত্বে না ফেলে নদীতেই ফেলছে। এতে নদীতেই চর জেগে উঠছে। এছাড়া ড্রেজিং স্পয়েল ¯্রােতের টানে ভাটিতে জমে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এই অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে শুধু বিপুল অংকের টাকার অপচয় হচ্ছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
যমুনা নদী পাড়ের মোহনগঞ্জ গ্রামের একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে বাঘাবাড়ী নৌপথে মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। সে সময় ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি যমুনা নদীর দুই পাশে বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ (বান্ডালিং পদ্ধতি) করে তাতে তালাই বিছিয়ে নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে আনা হয়। প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় পানি নদীর মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে পানির প্রবাহ ও স্্েরাতে গতি বেড়ে যায়। ফলে নদীতে পলি জমতে পারে না। পানির উচ্চতা ও প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় নাব্যতা ফিরে আসে। বর্তমানে ড্রেজিয়ের পাশাপাশি অল্প খরচে বান্ডালিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে সূত্র জানিয়েছে।

রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বোরো মওসুমে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী টাংগাইল, ময়মনসিং ও জামালপুর জেলায় সেচের জন্য আট লাখ ৯৬ হাজার ৭৫টি সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ ডিজেল ও ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎনির্ভর। সেচ মওসুমে ডিজেল চালিত ৮২৮টি গভীর নলকুপ, ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৮৭০টি অগভীর নলকুপ, ১১ হাজার ৩৭৭টি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচ কার্যক্রম চলবে। এর জন্য প্রায় ৫৫ কোটি লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হবে। ডিজেল চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়।

এদিকে জ্বালানী তেলনির্ভর বেড়ার ৭১ মেঘাওয়াট, বাঘাবাড়ীর ৫০ মেঘাওয়াট, রাজশাহীর আমনুরা ৫০ মেঘাওয়াটসহ ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের রয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার। এর জন্য বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে প্রায় ৮৪৩ মেগাওয়াট। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার না গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সেই সাথে এ অঞ্চলের সেচনির্ভর বোরো আবাদ ও উৎপাদনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাত এই নৌ-পথ নিয়ে সরকারকে ¯œায়ুচাপে থাকতে হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার ডিষ্ট্রিবিউটর এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপো থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাসহ টাংগাইল, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলায় জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়। আরিচা-বাঘাবাড়ী নৌপথ জ্বালানী তেল, চাউল, গম, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানী তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানী তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়।

উত্তরাঞ্চলে প্রায় পাঁচ শতাধিক পেট্রোল পাম্প, তিন শতাধিক ডিলার এবং পাঁচটি ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে। এছাড়া প্রায় তিন লক্ষাধিক বাস, ট্রাকসহ ডিজেল চালিত বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রয়েছে। নাব্যতা সঙ্কটে আন্ডারলোড নিয়ে জ্বালানী তেল নিয়ে জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে আসছে। তিনটি কোম্পানিতে প্রতিদিনের চাহিদার তুলনায় জ্বালানী তেল আমদানি কম হচ্ছে। প্রতিদিনের ঘাটতি আপদকালীন মজুদ থেকে পুরণ করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী তেল সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে। এতে সেচনির্ভর বোরো আবাদ এবং বিদু্যুৎ উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিআইডাব্লি¬উটিএ আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, আরিচা-বাঘাবাড়ী নৌপথের মোহনগঞ্জ ও মোল্লারচরে পানির গভীরতা কমে ৬ থেকে ৭ ফুটে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা ও যমুনা নদীতে প্রতিদিনই পানি কমছে। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানীতেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিআইডাব্লিউটিএ কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাত এই নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য মোহনগঞ্জ ও মোল্লারচর পয়েন্টে দু’টি ড্রেজার পলি অপসারন করছে। এদিকে বালির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পর ভাটিতে পলি জমে ডুবোচরগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
বিপিসি’র বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর যমুনা কোম্পানির ম্যানেজার এ, কে, এম জাহিদ সরোয়ার জানান, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে দুই কোটি ৫০ লাখ লিটার ডিজেল মজুদ আছে। নাব্যতা সঙ্কটে আন্ডারলোড নিয়ে জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে আসছে। গড়ে প্রতিদিন ডিজেল সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ লিটার। পেট্রোলের মজুদ আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেমে গেছে। ১-২ দিনের মধ্যে পেট্রোলবাহী জাহাজ ডিপোতে পৌছাতে না পারলে এ অঞ্চলে পেট্রোলের সঙ্কট দেখা দেবে। তবে ডিজেল সঙ্কটের কোন আশঙ্কা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*